একবার শিশু-কিশোরদের সামনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছিলেন শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তাদের কাছে তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘বলো তো, মাতৃভাষা কেন এত ভালোবাসার জিনিস?’
মাতৃভাষার কথা বলতে গিয়ে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন আঞ্চলিক ভাষার ওপর। বলেছিলেন, নিজের ভাষায় কথা বলতে পারলে মানুষ আরাম পায়। যখন নিজের ভাষায় কথা বলে, তখন সে জীবন্ত আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দুজন সিলেটের মানুষ এক হলে তারা ধুমসে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। দুজন চট্টগ্রামবাসী কিংবা ফেনীতে জন্ম নেওয়া মানুষও নিজেদের কথা প্রমিত ভাষায় বলবেন না। বলবেন খাঁটি আঞ্চলিক ভাষায়।
বিষয়টি সহজ করার জন্য তিনি প্রশ্ন রাখলেন, ‘বলো তো, জাপানিরা কোন ভাষা বলতে পারলে সবচেয়ে খুশি হবে? আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ না জাপানি?’
শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেয় তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, ‘জাপানি।’
‘চীনারা কোন ভাষায় কথা বলতে পারলে সবচেয়ে আরাম পাবে?’
‘চীনা ভাষা।’
‘ইংরেজরা?’
‘ইংরেজি ভাষা।’
‘তাই যদি হয়, আমাদের বাঙালিদের কোন ভাষায় সবচেয়ে বেশি শান্তি?’
‘বাংলা ভাষা।’
‘তোমরা কি সিন্ডারেলার গল্পটা জানো? সিন্ডারেলার পায়ের জুতা কি অন্য কারও পায়ে লেগেছিল? না শুধু সিন্ডারেলার পায়ে লেগেছিল?’
সমস্বরে শিক্ষার্থীরা বলল, ‘শুধু সিন্ডারেলার পায়ে লেগেছিল।’
‘অন্যের জামা-জুতা পরলে কি তোমার খুব আরাম লাগবে?’
‘না।’
‘কার জামা-জুতা পরলে আরাম লাগবে?’
‘নিজেরটা।’
ভাষাও তেমন। নিজের ভাষায় সবচেয়ে বেশি আরাম পায় মানুষ। আর কার মা সবচেয়ে আপন? নিজের মা। নিজের মা আর নিজের ভাষার সবচেয়ে কাছে থাকে মানুষ।
সূত্র: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বক্তৃতা সংগ্রহ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০০-১০১