একটা সময় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার হিসেবে নভেরার নামটা নেওয়া হতো না। কাছের বন্ধুরা জানতেন, কাজটি ছিল নভেরা আর হামিদুর রহমানের মিলিত প্রয়াস। কিন্তু অভিমানী নভেরা দেশ থেকেচলে যাওয়ার পর তাঁর কৃতিত্বটুকু যেন ভুলে যায় সবাই। এমনকি যে হামিদুর রহমান ছিলেন নভেরার সঙ্গে, তিনি নিজেই নিতে চাইলেন গৌরবের পুরো ভাগ।
নভেরাকে অনেকটা সহযোগী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। এতে সংস্কৃতি জগতের বন্ধুরা খুব কষ্ট পেলেন। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে ডেকে এনে হামিদুর রহমানকে নভেরা সম্পর্কে বলার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে নিলেন সৈয়দ শামসুল হক। কিন্তু যে কারণেই হোক, হামিদুর রহমান এড়িয়ে গেছেন নভেরাকে। এখন এ কথা সবাই জানেন যে ভাস্কর্যের জগতে বাংলাদেশের ভাস্করদের মধ্যে নভেরা আহমেদ প্রথম। তাঁর তুল্য ভাস্কর এ দেশে খুঁজে পাওয়া ভার। তিনি খ্যাতির জন্য বা অর্থের জন্য কাজ করতেন না। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করেননি তিনি। নভেরার সঙ্গে হামিদুর রহমানের প্রগাঢ় সখ্য ছিল, তবে একসময় তাতে চিড় ধরেছিল। সেটাই কি নভেরাকে ভুলে যাওয়ার একমাত্র কারণ?
সবাই ভুলেছেন এমন নয়। তবে নভেরার ব্যাপারে কিছু বলার জন্য বন্ধুদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ। সংবাদের একুশে ফেব্রুয়ারি বিশেষ সংখ্যায় একবার বের হলো সাইয়িদ আতীকুল্লাহর একটি কবিতা।
‘নভেরার কথা মনে পড়ে কারো?’ নভেরাকে খুব কাছ থেকে জানতেন কবি, তাই এই বেদনার্ত কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। সে কবিতায় একটি পঙ্ক্তি ছিল, ‘কি অভিমানী সে, আসে না কোনদিন শহীদ মিনারে...’
এবং কবি লিখলেন,
‘শহীদ মিনার কি করুণ ডাকে সেই নভেরাকে
কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার
কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার
কিছুতে পায় না সাড়া, ডাকে বারবার…
একুশের দিনে নভেরাকে যেন আত্মার ভেতর থেকে তুলে আনলেন সাইয়িদ আতীকুল্লাহ।
সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ২৫৮-২৫৯