বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিশেষ কায়দায় দেশ চালাতেন। বিশ্বসমাজের কথা জলাঞ্জলি দিয়ে মার্কিনদের স্বার্থরক্ষাই ছিল তাঁর জনপ্রিয় রাজনীতির মূলচাবি। তাই তাঁর আমলে বিশ্বনেতৃত্বের আসন থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে দেশটি। চলতি বছরের শুরুতে ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেকটা ম্লান হয়ে আসা দ্যুতি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেন বাইডেন।
২০ বছরের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার—এ পর্যন্ত বাইডেনের পররাষ্ট্রবিষয়ক সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। সমালোচনা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দিয়েছেন তিনি, যা মার্কিন জনগণকে অনেকটা আশ্বস্ত করতে পেরেছে। তাঁর বক্তব্যের মূল সুর, চলতি শতাব্দীতে চীনই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। তাই ওই দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীন, সামরিক ও প্রযুক্তিসহ অন্যদিক থেকেও যথেষ্ট শক্তিশালী। এ অবস্থায় দ্রুত বাড়ন্ত দেশটির গতিরোধ করতে ট্রাম্পের চেয়ে ভিন্ন উপায়ে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করে বাইডেন প্রশাসন। তার অংশ হিসেবে মিত্রদের সঙ্গে মরচে পড়া সম্পর্কে শাণ দিতে শুরু করে ওয়াশিংটন।
চলতি বছরের জুন এক সপ্তাহের ইউরোপ সফরে যান বাইডেন। যুক্তরাজ্যে জি৭-এর সম্মেলনে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন করে ফেরার ঘোষণা দেন। এর পর ন্যাটো সম্মেলনেও পুরোনো বিশ্বনেতার মতো আচরণ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চলে যাওয়ার আগেই কাবুল দখল করে তালেবান, যা ওয়াশিংটনের মিত্রদের মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি করে। তারা শঙ্কা বোধ করতে থাকে, প্রয়োজন শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরও এভাবে ছুড়ে ফেলতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে চীনকে চাপে রাখতে এবং তাইওয়ানকে সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিতে থাকেন বাইডেন ও তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে তাইওয়ান রক্ষায় চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেন বাইডেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় চীন। সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান বিষয়ে আগের নীতি, তথা এক দেশ নীতি মেনে চলবে বলে জানান হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষাসীমায় চীনা সামরিক বিমানের টানা অনুপ্রবেশ নিয়েও অসংলগ্ন মন্তব্য করেছেন বাইডেন ও মার্কিন কর্মকর্তারা। রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, আগামী মাসে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট সরাসরি না হলেও ভিডিও বৈঠকের চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ তাইওয়ান নিয়ে মাঝে মাঝে নরমগরম কথা বললেও মূলত নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।