চাঁদা দিয়েই ময়মনসিংহের মহাসড়কে চলছে অবৈধ শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ক্ষমতাসীন দল এবং জাতীয় পার্টির পরিচয় দিয়ে অনেকে এই চাঁদা আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এভাবে মহাসড়কে অটোরিকশা চালানোয় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। বাড়ছে যানজট। তবে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে সকলকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে অটোরিকশা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চালকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে দিন-রাত সড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো থাকে শত শত অটোরিকশা। এতে যানজটের কারণে নতুন বাজার, গাঙ্গিনাপাড়সহ অফিস আদালতে যেতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
অটোচালক আব্দুর কাদির জানান, তিনি টাউন হল থেকে সদর উপজেলার অষ্টধর পর্যন্ত অটোরিকশা চালান। জেলার বাইরেও রিজার্ভ যান। স্ট্যান্ডে গাড়ি রাখার কারণে সাধারণ খাতে (জিবি) দিতে হয় ৯০ টাকা। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনকে ১০ টাকা এবং রাতে সিরিয়ালের জন্য ১০ টাকা দিতে হয়। ভাড়া না থাকলেও এ টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
অপর অটোচালক মো. দুলু বলেন, ‘অটোরিকশা চালাতে হলে প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। পরে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মতো দিতে হয় স্ট্যান্ডে। প্রতিদিন স্ট্যান্ডে ইমন, সজিব এবং শুভ এই তিনজন টাকা তোলে।’
চালকেরা জানান, আগে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে সুজা নামে একজন স্ট্যান্ডে টাকা নিত। এখন জাতীয় পার্টির পরিচয়ধারী বিল্লালকে টাকা দিতে হয়। এর বাইরে মুক্তাগাছায় ৭০ টাকা এবং জামালপুরে খরচ হয় ১৩০ টাকা। পাশাপাশি অটো ভাড়া দিতে হয় ৫০০ টাকা। এত কিছুর পরেও প্রায়ই জরিমানা গুনতে হয় বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
টাউন হল অটোরিকশা স্ট্যান্ডের লাইনম্যান হেলাল আহমেদ বলেন, স্ট্যান্ডের বেতন ভুক্ত তিনি। মাস শেষে বেতন দিয়েই চলে তাঁর সংসার। তবে দায়িত্বে রয়েছেন সাব্বির হোসেন বিল্লাল। তিনিই স্ট্যান্ড পরিচালনা করেন। ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০টি অটোরিকশা রয়েছে স্ট্যান্ডে। এগুলো মুক্তাগাছা জামালপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। দৈনিক অটোরিকশাপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়া হয়। পরে সেগুলো ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়।
এ বিষয়ে স্ট্যান্ডের ‘দায়িত্বে থাকা’ জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি সাব্বির হোসেন বিল্লাল বলেন, ‘শহরের সবকিছুই আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রণ করে। সদরের সাংসদ বেগম রওশন এরশাদ। আমি তাঁর দলের কর্মী হিসেবে টাউন হল মোড়ের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দায়িত্বে রয়েছি। এটিও সকলকে ম্যানেজ করতে হচ্ছে।’
জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘জেলা শহর থেকে প্রায় আট হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাতায়াত করছে। মহাসড়কে এগুলো চলাচল নিষিদ্ধ। এগুলো কীভাবে চলছে, তাঁদের কে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা তো বুঝতেই পারছেন। একটা বাসের যত না খরচ হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হয় অটোরিকশার।’
এই নেতা বলেন, নতুন অটোরিকশা ভর্তি হলেই পাঁচ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আর আমাদের এখানে সদস্য হলে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিটি অটোরিকশা দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা দেয়।’ সেই টাকা কিছু নেতা-কর্মী এবং পুলিশ নেয়, মালিক সমিতির কেউ নেয় না বলে দাবি করেন তিনি।
ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শহরে অটোরিকশা থেকে পুলিশ টাকা নেয়, সেটা কেউ প্রমাণ দিতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেব। অনেকেই অনেক কথা বলতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা দেখতে হবে।’
ময়মনসিংহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় সময়ই টাউন হল মোড়ে দেখা যায় মহাসড়ক দখল করে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। প্রতিদিন ১৫-২০টি মামলা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। কারণ এগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। নেতারা ইচ্ছা করলেই যানজট নিরসনের পাশাপাশি অবৈধ পরিবহন চলাচল বন্ধ হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ কখনো পরিবহন থেকে চাঁদা নেয়নি। নেওয়ার সুযোগও নেই।