মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একসময় চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মেলার আয়োজন করা হতো। এসব মেলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পণ্য তুলে ধরা হতো। বিগত বছরগুলোতে মেলার আয়োজন কমে যায়। দীর্ঘদিন পর এ উপজেলায় শুরু হয়েছে বসন্ত মেলা।
গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আজ সোমবার পর্যন্ত। দুই দিনব্যাপী এ মেলায় উঠেছে হরেকরকমের পণ্য। মেলা দেখতে ভিড় করেছে শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীরা। দীর্ঘদিন পর মেলা হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
উপজেলার শহীদনগর বাজার পতনঊষারে এ মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যের স্টল বসেছে। কারুশিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাটির তৈরি জিনিসপত্র ও বাচ্চাদের খেলনা রয়েছে। মেলার এক পাশে মঞ্চে নৌকার আকৃতির মিউজিক বোর্ডে বাচ্চারা দোলনায় চড়ছে। এ ছাড়া বসন্ত মেলার মঞ্চে বাচ্চারা লোকজ সংস্কৃতির উৎসব করছে।
মেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে নৌকা আকৃতির মিউজিক বোর্ড নিয়ে এসেছেন জামিল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সিলেট অঞ্চলে প্রায় ২০ দিন এসেছি। কয়েক দিন আগে শমশেরনগর একটি মেলায় ছিলাম, সেখান থেকে এই মেলায় এসেছি। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের জন্য কোথাও মেলা হয়নি। এবার অল্প কিছু জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
খেলনার দোকানি ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খেলনার দাম কিছুটা বেড়েছে, আগের মতো এখন আর কেনাবেচা হয় না।’
মেলায় আসা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলে, ‘মেলায় দোলনা চেয়ারে বসে আনন্দ করেছি, খেলার পুতুল, গাড়ি, চুরি কিনেছি।’
নাতি-নাতনিকে মেলায় নিয়ে আসা মো. লুলু মিয়া বলেন, ‘বাড়ির পাশে মেলা বসেছে, এ জন্য দেখতে এলাম। আগেকার মেলায় আমরা কত আনন্দ করতাম; লাঠিখেলা, পালাগান, জারিগান গাইতাম। কিন্তু এখন আর এসব হয় না মেলায়।’
মেলায় আসা স্কুলশিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ। এখানে এসে প্রায় হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার অনেক কারুকার্য পণ্য দেখলাম।’
বসন্ত মেলা সম্পর্কে শহীদনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বশর জিল্লুল বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা হতো। গত দুই বছর এ মেলা হয়নি। বাঙালির সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য আমরা দুই দিনব্যাপী বসন্ত মেলার আয়োজন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, মেলা উপলক্ষে নৃত্যানুষ্ঠান রয়েছে। আমাদের এখানে কৃষিসামগ্রীসহ বাঙালি ঐতিহ্যের যাবতীয় জিনিস উঠেছে।