স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার দিনমজুর আব্দুল মতিনের (৪৫)। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে দালালের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তিনি। আর সেই খরচ জোগাড় করতে নিজের জমি ও গরু বিক্রি করে টাকা তুলে দিয়েছিলেন দালালের হাতে। কিন্তু সুস্থ শরীর নিয়ে সৌদি আরবে গেলেও দালালদের নির্যাতনে এখন তিনি কথা বলতে পারেন না। নিজে নিজে চলতেও পারেন না। বিছানাতেই কাটছে তাঁর সময়।
আব্দুল মতিন নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের আগ্রাণ গ্রামের বাসিন্দা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী রুমি খাতুন।
খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে মতিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙা ঘরে কাঠের চৌকিতে শুয়ে আছেন আব্দুল মতিন। এ সময় উপস্থিত স্কুলশিক্ষক তসলিমা খাতুন বলেন, মতিন তাঁর দেবর হন। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। ১০ কাঠা জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে তিনি প্রতিবেশী আলম হোসেনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে যান। যাওয়ার সময় তাঁরা জানিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে হোটেলে পানি সরবরাহের কাজ করতে হবে। মাসিক বেতন দেওয়া হবে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ হাজার টাকা। সেই ভিসার মেয়াদ হবে দু’বছর।
তসলিমা খাতুন আরও বলেন, সৌদি আরবে গিয়ে আব্দুল মতিন জানতে পারেন তাঁর কোনো ভিসা নেই। তিনি অবৈধ অভিবাসী। তাই তাঁকে পালিয়ে থাকবে হবে। সে জন্য তাঁকে কাজ দেওয়া হয় মরুভূমিতে পশুপালনের। কোনো বেতন না দিয়ে শুধু খাওয়া-পরার টাকা দেওয়া হয়। এ কথা আলমকে এবং বাড়িতে জানানো হলে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে স্ট্রোক হয় তাঁর। সৌদি সরকার সেখানের হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা দেয়। পরে সরকারি সহায়তা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
আব্দুল মতিনের বড় ছেলে রায়হান আলী স্বপন বলেন, বাবা সুস্থ থাকা অবস্থায় তারা স্কুলে যেত। এখন সব বাদ দিয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে তারা।
আলম হোসেন আত্মগোপনে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বা বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে আলম হোসেনের আত্মীয় ও স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহ আলম বলেন, মতিন তাঁর উপস্থিতিতে টাকা দিয়ে বিদেশে গেছেন। মতিনের অবস্থা জানার পর আলমকে একাধিকবার বিষয়টি সমাধানের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কোনো কথা শোনেননি সে।
মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, এটি একটি অমানবিক ঘটনা। তিনি পরিষদের মাধ্যমে সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’