রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়েই। এশিয়ার দু-একটি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা। পাকিস্তানে ইমরান খানের অবস্থা বেসামাল। শ্রীলঙ্কা থেকেও পাওয়া যাচ্ছে খারাপ খবর। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার দেশটি। সংকটে জর্জরিত বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত রাখতে শুক্রবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
সুশাসনের অভাব, পরিবারতন্ত্র, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূরদর্শিতার অভাব একটি দেশকে যে কতটা ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে, শ্রীলঙ্কা তার আপাতত সর্বশেষ উদাহরণ।
২০০৯ সালে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটলে একটি নতুন পর্বে প্রবেশ করে শ্রীলঙ্কা। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির তৎকালীন সরকার দ্রুত উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ ছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। স্বল্প মেয়াদে ওই সব পদক্ষেপ কিছু সুফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের জালে আটকা পড়ে এখন হাঁসফাঁস করছে দেশটি।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। চলতি বছরের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। অথচ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ২৩০ কোটি ডলারের মতো। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য মাত্র ৮০ কোটি ডলার।
২০১৯ সালের এপ্রিলে ভয়াবহ বোমা হামলার পর নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) পার্টি। রাজাপক্ষে পরিবারনিয়ন্ত্রিত দলটির সরকারপ্রধান হন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে হন প্রেসিডেন্ট। আরও দুই ভাই মন্ত্রী। এর বাইরে জাতিজা-জ্ঞাতিরাও আছেন ক্ষমতার বড় বড় খুঁটি হয়ে। অথচ দেশটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত না।
রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনে শ্রীলঙ্কার আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হয়ে উল্টো অবনতি হয়েছে। রিজার্ভ সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। গ্যাস-সংকটের কারণে মানুষ রান্নার চুলা জ্বালাতে পারছে না। কেরোসিন নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার একটানা ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকার পর রাজধানীতে শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে রাজধানী কলম্বোয় কারফিউ জারি করা হয়। এরপর গত শুক্রবার রাতে সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলা হলেও এই নিদান কি রোগ সারাতে সক্ষম হবে?