লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ফসলি জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার মালিকেরা। অর্থের লোভে কৃষকেরাও তা বেচে দিচ্ছেন। ওই মাটি পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে ইট। এতে ভাটার মালিকেরা লাভবান হলেও ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাক ও পাহাড় কাটার ট্রলিতে করে টানা হচ্ছে মাটি। এতে গ্রামীণ রাস্তা ও পাকা সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ চরবংশীর চর কাছিয়া এলাকায় ইদ্রীস মোল্লা, দাদন মোল্লা, মহিউদ্দিন মোল্লাসহ পাঁচ থেকে ছয় ব্যক্তি মাটির ব্যবসা করেন। তাঁরা ১৫-১৬ জন শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে ইটভাটার মালিকদের কাছে উচ্চ মূল্যে বেচে দিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে উপরিভাগের দুই থেকে তিন ফুট মাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে মাটি বহনকারী ট্রাকের কারণে মাটি বেচেন না, এমন কৃষকদের খেতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে এলাকার কৃষক জমির আলী, মো. মানিক ও আবুল কাশেমের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, প্রতিবছরই মাটির উপরিভাগ বেচে তাঁরা কিছু টাকা পান। বর্ষায় এ জমি আবার ভরাট হয়ে যায়। এ কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নিয়ে তাঁদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।
মাটির ব্যবসায়ী ইদ্রীস মোল্লা বলেন, ‘আমরা জমির মালিকদের কাছ থেকে তাঁদের ফসলি জমির উপরিভাগ দুই-তিন ফুট কিনে নিই। সেই মাটি বেশি দামে বেচে আমাদের সংসার চলছে। যেহেতু পাশাপাশি জমি তাই প্রতিবেশীর কিছুটা ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। মাটি নিতে গেলে গ্রামীণ রাস্তা ও পাকা সড়কগুলোর কিছুটা ক্ষতি তো হবেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ইটভাটামালিক বলেন, ‘এ উপজেলায় কমপক্ষে পাঁচটি ইটভাটা চালু রয়েছে। সবগুলোতেই মাটি কেনা হচ্ছে। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই জমি ও কৃষকের ক্ষতি করা। তারপরও বাধ্য হয়ে আমরা অধিক দামে মাটি কিনে আনছি। কৃষকও টাকার প্রয়োজনে বেচে দিচ্ছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, সরকারি নিয়ম না মেনেই ফসলি জমিতে অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তাঁরা কিনে নিচ্ছেন। এতে ফসলি জমি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অন্জন দাশ বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে ফেলা মানে জমির উর্বরতা ধ্বংস করে দেওয়া। এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।