ইউক্রেনে রুশ হামলার শুরু ২৩ দিনের মাথায় গত শুক্রবার এক ভিডিও বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকে অন্য প্রসঙ্গ থাকলেও ইউক্রেন-রাশিয়াই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। রাশিয়াকে একঘরে করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা কমাতে মস্কোর প্রতি বেইজিং যেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দেয়, এটাই ছিল বাইডেন-সি’র আলোচনার সারকথা।
বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউসের প্রেসে সচিব জেন সাকি জানান, রাশিয়াকে কোনো ধরনের সহায়তা দিলে, চীনকে তার ফল ভোগ করতে হবে। ইউরোপ ও বিশ্বের অন্য মিত্র ও সহযোগীদের নিয়ে তা করা হবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টাই এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। ইউক্রেন সংকটে কারও লাভ নেই। তাই রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রকেও সংলাপের পরামর্শ দিয়েছে চীন।
চীনা বিশ্লেষক চেন ফেং গত বৃহস্পতিবার দেশটির ‘গুয়ানচাডটকমে’ লিখেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর এর এতটা হেরফের হয়নি। তার ওপর ইউক্রেন ইস্যু ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকির বিষয়ে ফেং বলেন, চীন একটি স্বাধীন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। বেইজিংকে ওয়াশিংটনের হুমকি মেনে চলতে হবে, এটা হাস্যকর। জাতিসংঘও যদি ইউক্রেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যেকোনো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের মতো চীনও তা মেনে চলতে বাধ্য নয়।
ভারত, ইসরায়েল, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারতের মতো চীনের সঙ্গেও রাশিয়ার জ্বালানিসহ অন্য আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। আগামীতে তা বাড়তে থাকবে।
সৌদি আরব ইতিমধ্যে ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন করতে সম্মত হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়া ইকোনমিক ইউনিয়ন ও চীন ডলারের বাইরে গিয়ে নতুন মুদ্রানীতি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলার ও ইউরোর পাশাপাশি চীনা মুদ্রার উত্থান জোরদার হচ্ছে। এ অবস্থায় রাশিয়াকে একঘরে করা বা চীনকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি এতটা কার্যকর হবে না বলে মনে করেন ফেং।