ইউরোপে মহামারির শেষ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইউরোপ মহাদেশে সংস্থাটির পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ বলেছেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ইউরোপে এই মহামারিকে নতুন এক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে এবং হয়তো এই অঞ্চলে মহামারির ইতি ঘটাতে পারে। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, অতিসংক্রামক ওমিক্রনই যে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ ধরন—এমন ধারণা বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ওমিক্রনের আবির্ভাবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। করোনার সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৩৫ কোটি ২৩ লাখের বেশি মানুষের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ লাখের বেশি রোগীর। সুস্থ হয়েছেন ২৮ কোটি ২ লাখের বেশি করোনা সংক্রমিত রোগী। ইউরোপে এ পর্যন্ত ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত রোববার এক দিনে এই মহাদেশে ১০ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের।
ইউরোপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ গত রোববার বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটা ধরে নেওয়া যায় যে ইউরোপ অঞ্চল মহামারি শেষ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, অতিসংক্রামক ওমিক্রনে আগামী মার্চ নাগাদ ইউরোপের ৬০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হতে পারে।
হ্যান্স ক্লুগ বলেন, ওমিক্রনের বর্তমান ধাক্কার পর বিশ্বজুড়ে একধরনের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হবে। সেটা হতে পারে ব্যাপক টিকাদানের কারণে, অথবা ব্যাপক হারে সংক্রমিত হয়ে, নতুবা দুটো মিলেই। এরপর বছরের শেষ ভাগে করোনা আবারও ফিরবে। তবে সেটা মহামারি আকারে নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসিও একই ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গত রোববার তিনি এবিসি নিউজের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে। তবে তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এভাবে চলতে থাকলে পুরো দেশেই সংক্রমণ কমবে।
এর আগে গত সপ্তাহে আফ্রিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, ওমিক্রনের আবির্ভাবের পর প্রথমবারের মতো এই মহাদেশে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। মৃত্যুও কমছে। অর্থাৎ আফ্রিকা মহাদেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ তার চূড়া অতিক্রম করেছে বলা যায়।
ভিন্ন সুর আধানোমের গলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস অবশ্য এখনই আশায় বুক বাঁধতে নারাজ। তিনি বলেছেন, অতিসংক্রামক ওমিক্রনই যে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ ধরন এবং এরপর মহামারি শেষ হবে, তা ধরে নেওয়া বিপজ্জনক হবে। অবশ্য তিনি এও বলেছেন, ব্যাপকভাবে পরীক্ষা ও টিকাদানসহ সঠিক কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করলে করোনা মহামারির ভয়াবহতা এ বছরই শেষ হতে পারে।
গতকাল সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে গেব্রেয়াসুস আরও বলেন, মাত্র নয় সপ্তাহ আগে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে এরই মধ্যে ৮ কোটি মানুষের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের পুরোটা সময়ে করোনা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি। এখন যে পরিস্থিতি, তা করোনাভাইরাসের আরও নতুন ধরনের আবির্ভাবের জন্য আদর্শ।