ব্রতচারী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল ১৯৩১ সালে। হাওড়া জেলার প্রথম শিবির থেকে। এর আগে বয় স্কাউট ছিল ছোটদের একমাত্র আন্দোলন। পটুয়া কামরুল হাসান সে সময় স্কাউটিং করতেন। ১৯৩২ সালে তিনি হাফপ্যান্ট, মিলিটারি শার্ট ও গলায় স্কার্ফ দিয়ে পায়ে বাটা কোম্পানির নটিবয় শু পরে স্কাউটের বালক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। গ্রামে গিয়ে এই পোশাকে ধানখেতের মধ্য দিয়ে যখন ঘুরে বেড়াতেন, তখন অতিপরিচিত কৃষকেরাও তাঁকে চিনতে পারতেন না। এভাবে আপনজনদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন তিনি।
১৯৩৭ সালে একজন বড়লোক স্কাউট মাস্টারের বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রুপের সব সদস্য গিয়েছিলেন। কত সাহেব, আইসিএস এসেছিলেন। সবার পরনে সাহেবি পোশাক। হঠাৎ দেখা গেল একজন ফর্সা রঙের মানুষ, যাঁর পরনে খদ্দরের ধুতি, গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি এবং একটি খদ্দরের চাদর। ঢোকার সময় কামরুলদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী, তোমরা বুঝি স্কাউট? আমি কিন্তু খাঁটি বাঙালি।’ বলে তিনি হন হন করে বুক টান করে চলে গেলেন ভেতরে। কামরুলের সাথিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ভদ্রলোক কে?’
কামরুল চিনতেন। বললেন, ‘ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরু সদয় দত্ত।’
সারা বিশ্বে এই ব্যতিক্রমী পোশাক পরা লোকটি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেদিন থেকে কামরুল ভেবেছেন, এই লোকটির কাছে যেতে হবে। ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই পরম শুভক্ষণ এল। তত দিনে সারা বাংলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালি সংস্কৃতি ও শুদ্ধ জাতীয়তাবাদ প্রত্যেক বাঙালির জীবন গঠনে একটা স্বকীয়তা রক্ষা করবে—সেটাই ছিল ব্রতচারী আন্দোলনের মূলনীতি।
গুরু সদয় দত্তের চেতনা ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। তাঁর কাছাকাছি না এলে কামরুল হাসান বুঝতে পারতেন না তিনি বাঙালি। গুরু সদয় দত্তই তাঁর ভেতরে জাগিয়ে দিয়েছিলেন গৌরবময় অতীতের মাধ্যমে সামনে চলার ইঙ্গিত এবং তা দিয়ে গৌরবময় ভবিষ্যৎ গড়ার ভাবনা।
সূত্র: কামরুল হাসান, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা, পৃষ্ঠা ১৩৭-১৩৯