থিয়েটারে আজাদ আবুল কালাম এসেছিলেন কাকতালীয়ভাবে। তোতলামি ছিল তাঁর সঙ্গী। ফলে সংলাপ বলতে পারবেন, এ রকম বিশ্বাস ছিল না।
মাসুদ আলী খান নামে এক বন্ধু ছিলেন আজাদের। বহুমুখী ছিল তাঁর প্রতিভা। আঁকতে পারতেন, গাইতে পারতেন, গিটার বাজাতে পারতেন। গান গাইতেন ভালো। ‘চন্দনা গো রাগ কোরো না’ বলে যে জনপ্রিয় বাংলা গানটি আছে, সেটির ইংরেজি করে গেয়েছিলেন মাসুদ—‘চন্দনা হায় প্লিজ ডোন্ট ক্রাই, ইফ ইউ ক্রাই, সে হোয়াট ক্যান আই ড্যু?’
এর মধ্যে মাসুদের মাথায় ঢুকেছে, নাটক করতে হবে। আজাদকে নিয়ে ছুটলেন ঢাকা থিয়েটারের রিহার্সাল রুমে। রিহার্সাল চলছে ভেতরে, বাইরে বসে আছেন মাসুদ আর আজাদ। যাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, তিনি রিহার্সালে ব্যস্ত। দুই-তিন ঘণ্টা পর বের হলেন তিনি, যাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন মাসুদ। তিনি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করলেন। পাঙ্ক জেনারেশনের ছেলে আজাদ। চুল-দাড়ি কাটেন না, সানগ্লাস পরে থাকেন, কেনই বা তাঁকে পছন্দ হবে?
এরপর আরণ্যকে ঢুকলেন মাসুদ। আজাদও মাঝে মাঝে তাঁদের মহড়ায় গেলেন। শহীদ মিনারে একদিন পথনাটক দেখে বুঝলেন, নাটকের মধ্যে সৌন্দর্য আছে। আরণ্যকেই ঢুকে গেলেন। বসে বসে মহড়া দেখেন আর চা আনার মতো ফুট-ফরমাশ খাটেন। মামুনুর রশীদের সঙ্গে আজাদের প্রথম কথা হয় আরণ্যকে যাওয়া-আসা শুরু করার ছয় মাস পরে!
এ সময় একটা কল শো এল। একজন অভিনেতা যেতে পারবেন না। মামুনুর রশীদ বললেন, ‘আজাদ করুক। ওর তো সব মুখস্থ।’
আজাদ ভড়কে গেলেন। নাটক মানে কথা বলতে হবে এবং মনে করে সংলাপ বলতে হবে। কল শো, বন্ধ করার উপায় ছিল না। কারণ একটি শো করলে সে আমলে ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সে অনেক টাকা।
আজাদ অভিনয় করলেন। তিন-চারবার হোঁচট খেয়ে উতরে গেলেন তিনি। এটাই সংলাপসহ প্রথম অভিনয় তাঁর।
সূত্র: জন্মদিনের আলাপনে আজাদ আবুল কালাম, থিয়েটারওয়ালা