রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চতুর্থ ধাপের নির্বাচন ২৬ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই চলছে জমজমাট প্রচার। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা ইচ্ছামতো প্রচারকাজ চালাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার মাইকের আওয়াজে এলাকাবাসীর কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন, সংরক্ষিত সদস্য (নারী) পদে ৭৮ জন এবং সাধারণ সদস্য হিসেবে ২২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইউপি নির্বাচন আচরণবিধি ২০১৬ অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ও যানবাহনে পোস্টার লাগানো যাবে না। বেলা দুইটার আগে ও রাত আটটার পর মাইকিং করা যাবে না। কিন্তু এসবের কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ভোর থেকে শুরু করে রাত দুইটা পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ভোটের প্রচার। চলছে মোটরসাইকেল মহড়া। সব ইউনিয়নে রাত ৮টার পর জনসভা শুরু হয়ে চলছে ১২-১টা পর্যন্ত। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। রেস্তোরাঁয় চলছে ভোটারদের খাওয়ানো।
এদিকে উপজেলার সরদহ ইউপিতে আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টি বাংলাদেশের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারসামগ্রী তৈরি করেছেন। তাঁর হাতুড়ি প্রতীকের প্রচারে প্রায় চার হাত লম্বা কাঠের হাতুড়ি বানিয়ে প্রদর্শন করছেন। অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসানুজ্জামান মধু প্রায় চার হাত দীর্ঘ বইঠা বানিয়ে প্রদর্শন করছেন।
গতকাল সোমবার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমে উঠেছে হাটবাজারের পান ও চায়ের দোকানগুলো। সেখানে ভিড় করছেন বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।
এ সময় পুঠিমারী বাজার মোড়ে কথা হয় বনকিশোর গ্রামের জামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। পাকা ঘরের দেয়ালে, রাস্তার ধারের গাছে পোস্টার লাগিয়েছেন। প্রশাসনের লোক এগুলো দেখার জন্য আসছেন না। আমরা বাধা দিলেও মানছেন না।’
বামনদিঘী গ্রামের গৃহবধূ মাসরুফা খাতুন বলেন, ‘দিনেরাতে মাইকিং করা হচ্ছে। মাইকের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়া যাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের ঘুম, লেখাপড়া শেষ।’
জানতে চাইলে ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আবু তালেব বলেন, ‘সবাইকে মানতে বলেন, তখন আমিও আইন মানব।’
চার ফুট কাঠের হাতুড়ি প্রদর্শনের ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান তপন বলেন, ‘আমি প্রতীক অনুযায়ী প্রচারকাজে কাঠের হাতুড়ি বানিয়েছি ৷ তবে সেটা ভোটারকে ভয় দেখানোর জন্য না।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, ‘আচরণবিধি অমান্য করার বিষয়টি আমি নিজেও খেয়াল করেছি। প্রার্থীদের সতর্ক করছি। তবু অনেকে বিষয়টা গুরুত্ব না দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা ইউপি নির্বাচনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়তি রানী কৈরী বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। আইন না মানলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’