নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে তাজিম বাবু নামের আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। তাঁর এই বালু ব্যবসার কারণে নদীর ওয়াকওয়েসহ এলাকার রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার ওপর দিয়ে যাওয়া ড্রেজারের পাইপের কারণে প্রতিনিয়ত সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
তাজিম বাবু সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড় থেকে শুরু করে নদীর মধ্য অংশ পর্যন্ত ড্রেজারের ভাসমান ঘাট বসিয়ে ট্রলার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীতে ড্রেজার বসানো ওই অংশ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ড্রেজারের কারণে নদী সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন না নিয়ে এভাবে তিনি দীর্ঘদিন নদী দখল করে বালুর ব্যবসা করে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজারে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, বিআইডব্লিউটিএর লোকজনকে ম্যানেজ করেই তাঁরা এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বলেন, পাইপের মাধ্যমে বালু নিয়ে রংধনু সিনেমা হলের পাশে গদিতে রাখেন। পরে সেই বালু ট্রাক দিয়ে আশপাশের এলাকায় বিক্রি করা হয়।
আবদুল মজিদ নামের এক রিকশাচালক জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে রাস্তায় রিকশা নিয়ে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে এখানে ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানান, শীতলক্ষ্যা নদী দখল এবং অবৈধ বালু ও পাথর ব্যবসা ঠেকাতে ২০১৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকা থেকে ঢাকার ডেমরা ঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয় ওয়াকওয়ে। ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কিন্তু তাজিম বাবুর এই ড্রেজারের পাইপের কারণে ওয়াকওয়ের একটি অংশ ভেঙে গেছে। এতে পথচারীদের ওয়াকওয়েতে চলাচল করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
দিদারুল আলম নামের সিদ্ধিরগঞ্জের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে এসব অবৈধ দখলদারের কারণে শীতলক্ষ্যা নদী জৌলুশ হারাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অবৈধ ড্রেজারসহ নদীর তীরে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা আগের রূপ ফিরে আসে। এতে দিন দিন শীতলক্ষ্যা নদী সংকুচিত হচ্ছে।
জসিম মিয়া নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে রাস্তায় মাটি দিয়ে ২-৩ ফুট উঁচু করায় ছোট ছোট ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাঁচ-ছয়জন যাত্রী নিয়ে পার হতে হিমশিম খায়। শুধু তা-ই নয়, বৃষ্টির মৌসুম এলেই পাইপের ওপরে দেওয়া মাটি সরে পাইপ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে মোটরসাইকেলচালকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজিম বাবু নদী দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, ‘তাজিম বাবু প্রায় ১০ বছর ধরে বালুর ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালুর ব্যবসা করে কি না, তা আমার জানা নেই।’
বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল জানান, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ রাজু বলেন, ‘আমরা শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’