ঢাকার দুই স্বনামধন্য নাট্যদল থিয়েটার আর নাগরিক মিলে একটা নাটক করেছিল একদা। সেই নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ডফোর্ড। নাটকটি ছিল শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’।
ম্যাকবেথ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাগরিকের আলী যাকের। লেডি ম্যাকবেথ হয়েছিলেন থিয়েটারের ফেরদৌসী মজুমদার। লেডি ম্যাকবেথ চরিত্রে নির্বাচন করার আগে হোটেল শেরাটনে ফেরদৌসী মজুমদারকে ডেকেছিলেন ক্রিস্টোফার স্যান্ডফোর্ড। অন্য অভিনয়শিল্পীদেরও ডেকেছিলেন সেখানে। তা ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে কথোপকথনটা হয়েছিল এ রকম:
ক্রিস্টোফার স্যান্ডফোর্ড: তুমি কি শেক্সপিয়ারের মূল নাটকটা পড়েছ?’
ফেরদৌসী মজুমদার: না, পড়িনি। তবে ছোটদের জন্য সহজ করে লেখা ম্যাকবেথ আমি পড়েছি।’
ক্রিস্টোফার: ম্যাকবেথ তো নানা দেশে নানা ভাষায় মঞ্চস্থ হয়েছে। সেগুলোর কোনোটি কি তুমি দেখেছ?’
ফেরদৌসী: ‘না।’ এ কথা বলার সময় খুবই লজ্জিত হলেন ফেরদৌসী মজুমদার। আর উল্লসিত হলেন ক্রিস্টোফার স্যান্ডফোর্ড। ক্রিস্টোফারের উল্লাসে ঘাবড়ে গেলেন ফেরদৌসী। ক্রিস্টোফার বললেন একেবারে অন্য রকম কথা। ‘ফাইন, আমি এটাই চেয়েছিলাম!’
যে ম্যাকবেথ দেখেনি, মূল শেক্সপিয়ার পড়েনি, তাকেই চাইছেন পরিচালক! কেন এ রকম একজনকে দরকার, তার ব্যাখ্যা করলেন ক্রিস্টোফার। বললেন, ‘তুমি কোনোটাই দেখোনি, শোনোনি বলে তুমি যে অভিনয়টা করবে, সেটা হবে সম্পূর্ণ তোমার মতো। অন্য কারও প্রভাব থাকবে না তাতে। নতুন একটা কিছু বেরিয়ে আসবে তাতে।’
মহড়ার সময় পুরো স্বাধীনতা দিলেন পরিচালক। শুধু কখনো ভুল কিছু করলে নিজের অভিমত জানিয়ে দিতেন তিনি। তাঁর মুখ ছিল সদাই হাস্যময়। ফলে মহড়ার সময় একেবারেই ক্লান্ত লাগত না।
সূত্র: ফেরদৌসী মজুমদার, অভিনয়জীবন আমার, পৃষ্ঠা ৫৯-৬০