হাইকোর্টের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি যখন অধিবেশনে ছিলেন, তখন ঢাকায় চলছিল জেনোসাইড।
জেনেভায় থাকাকালীন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র নিহত হয়েছেন। ১৫ মার্চ আবু সাঈদ চৌধুরী প্রাদেশিক শিক্ষাসচিবের কাছে চিঠি পাঠান। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলি চালনার পর আমার উপাচার্য থাকার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম।’
২৬ মার্চ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের খবর শুনে বুঝতে পারেন, ভয়াবহ কিছু ঘটেছে ঢাকায়। জানতে পারেন, ঢাকার সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তখনই তিনি অধিবেশনে গিয়ে বিবিসির খবরের উল্লেখ করেন কমিশনের চেয়ারম্যান মি. এগিলারের কাছে। তাঁর অনুমতিসাপেক্ষে সেখান থেকে চলে যান লন্ডনে।
২৭ মার্চ তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে যান পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ইয়ান সাদারল্যান্ড ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মি. ব্যারিংটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা ঢাকা থেকে আসা ২৫ মার্চের ভয়াবহ টেলেক্স পড়ে শোনান। শেখ মুজিবকে বন্দী করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেখানে। তবে খবরের সত্যতা নিরূপণ করা যায়নি।
বিচারপতি চৌধুরী মি. সাদারল্যান্ডকে বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক রইল না। আমি দেশ থেকে দেশান্তরে যাব, আর পাকিস্তানি সৈন্যদের এই নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার কথা বিশ্ববাসীকে জানাব। তারা আমার ছেলেমেয়েদের হত্যা করেছে। এর প্রতিবিধান চাই।’
১২ এপ্রিল বিচারপতি চৌধুরী কলকাতা থেকে আমীর-উল ইসলামের একটি ফোন পান। বহির্বিশ্বে প্রবাসী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি পদে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে। তিনি সম্মত হন।
সূত্র: আবদুল মতিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল, পৃষ্ঠা ৬৯-৭৪