কাজী মোতাহার হোসেনের দুটো বিষয়ে ছিল নামডাক। একটি হলো দাবার প্রতি নেশা, আরেকটি তাঁর আত্মভোলা মন। অসাধারণ গণিতবিদ হিসেবে একাডেমিক পর্যায়ে তাঁর পরিচিতি ছিল, কিন্তু আত্মভোলা প্রফেসরের কথা সবাই জানে।
একবার ১৯৬৫ সালে করাচিতে দিলারা হাশেমদের মা-বাবার থাকার জায়গা আজিজাবাদের বাড়িতে সস্ত্রীক উঠেছেন তাঁরা। দিলারা হাশেম তাঁর গার্ডেন রোডের বাড়ি থেকে চলে এলেন সাজু খালা ও খালুকে দেখতে।
সেখানে দিলারা হাশেমের মায়ের গান শুনে তাঁরা সাজু খালার এক জ্ঞাতিভাইয়ের বাড়ি কেমাড়ীর দিকে রওনা হলেন। গাড়িতেই উসখুস করছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন। সেই জ্ঞাতিভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথেই তিনি দেখলেন, পাশের একটি বাসায় কয়েকজন লোক দাবা খেলছেন। ‘আমি একটু আসি’ বলে উধাও হয়ে গেলেন কাজী সাহেব। রাত বাড়ল। খাওয়াদাওয়া সারা হলো, কিন্তু কাজী সাহেবের দেখা নেই। এই বিদেশবিভুঁইয়ে কোথায় গেলেন তিনি? সাজেদা খাতুন তাঁর জ্ঞাতিভাই বাহাউদ্দিনকে নিয়ে বেরোলেন তাঁকে খুঁজতে। অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল সেই বাড়িটিতে, যেখানে দাবা খেলা হচ্ছিল। সময়ের কোনো হুঁশ ছিল না কাজী সাহেবের।
এর বহু আগে একবার সঙ্গীসহ দাবা খেলায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি। কিন্তু দাবা খেলতে খেলতে একটু পর খেয়াল করলেন, যে চৌকিতে দাবার বোর্ড রাখা হয়েছে, সেটা হঠাৎ কাঁপতে শুরু করেছে এবং গুটিগুলো পড়ে গেছে। খুব খেপে গেলেন কাজী সাহেব। তিনি তখন ভাবছিলেন কোন চাল চলবেন, অথচ গুটিগুলো পড়ে গেল! আবার গুটি সাজিয়ে খেলা শুরু হলে কাজী সাহেব মনে করলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় বুঝি গুটিগুলো ইচ্ছে করে ফেলে দিচ্ছেন।
এ সময় সাজেদা খাতুনসহ সবাই হইচই করে বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিচ্ছিলেন। কিন্তু সে কথা কানে ঢোকেনি কাজী সাহেবের। পরে জানা গেল প্রবল ভূমিকম্প হয়েছিল তখন। এ কারণেই গুটিগুলো পড়ে যাচ্ছিল!
সূত্র: কাজী মোতাহার হোসেন আপনজনদের স্মৃতি কথা ৬৭-৬৮