ঢাকায় এসেছিলেন যখন, তখন সৈয়দ শামসুল হককে মুর্তজা বশীর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামে তাঁর ফ্ল্যাটে আসার জন্য। বলেছিলেন, ‘গোটা তিরিশেক নতুন ছবি আঁকছি, একটা এক্সিবিশন করব। বাড়িতে এলে দেখতে পাবে।’
এই আলাপের তিন মাস পর সৈয়দ হক গেছেন মুর্তজা বশীরের বাড়ি। গিয়ে দেখেন, ৩০টি ক্যানভাস আছে ঠিকই, কিন্তু একটিতেও তুলি ধরেননি বশীর। তবে ক্যানভাস তৈরি হয়ে একের পিঠে আরেকটি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুর্তজা বশীর কোনো ক্যানভাসে দিয়েছেন গাঢ় লাল রং, কোনোটিতে নীল রঙের জমিন তৈরি করে রেখেছেন।
কেন এত দিন ধরে ছবি আঁকেননি, তার একটা ব্যাখ্যাও তৈরি করে রেখেছিলেন মুর্তজা বশীর। বলছিলেন, তার বাঁ হাতে ব্যথা।
সৈয়দ হক যতটুকু জানেন, মুর্তজা বশীর ডান হাত দিয়ে ছবি আঁকেন। হকের মনে তৈরি হওয়া প্রশ্নটা ভেতরে-ভেতরে বুঝে বশীর বাঁ হাতখানা তুলে ধরে বলেন, ‘পুরো হাতটা ওপরে তুলতে পারি না। ডাক্তার বলেছেন, বাহুমূলের রস নাকি শুকিয়ে যাচ্ছে। বেশ ব্যথা হয়।’
তারপর জানান, ‘ছবি আঁকার সময় আমি ক্যানভাস বাঁ হাতে ধরে রাখি, যাতে ডান হাতে আমার তুলির চাপে ক্যানভাস নড়ে না যায়।’
কোন ধরনের ছবি আঁকবেন, সেটা জানতে চাইলে বশীর বলেন, তিনি এবারে বিমূর্ত ছবি আঁকবেন না। ফিরে যাবেন ফিগারেটিভ কাজে। তবে আগের মতো নয়। পাল যুগের অঙ্কনরীতির কিছু বৈশিষ্ট্য তিনি ব্যবহার করবেন। পাল যুগের শিল্পী আগে ফিগারের একটা ড্রইং করতেন, সেই ড্রইং পাকা করে তার ওপরে রং চাপিয়ে একটা ওয়াশ দিয়ে নিতেন। তারপর ধীরে ধীরে আউটলাইন বের করে আনতেন। বশীর সেই পথটাই ধরবেন।
কেন হঠাৎ এই ভাবনা?
বশীরের উত্তর: বিমূর্ত চিত্রের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। একটা দূর গিয়ে আর এগোনো যায় না। ফিগারেটিভ সম্ভাবনার দিগন্ত এক জীবনে ছোঁয়া যাবে না।
সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ৮৯-৯০