২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছিল সৈয়দ শামসুল হকের ৮০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান। জাতীয় জাদুঘরের খোলা চত্বরে তা উদ্যাপন করল কবিতা পরিষদ। সৈয়দ হক সেখানে পড়লেন ‘দৃষ্টিভূমিতে দীর্ঘছায়া’। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তিনি পড়লেন। সে লেখায় উঠে এল দেশ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, আশা, স্বপ্ন। কবি রফিক আজাদ বললেন, ‘আরও কিছুকাল সৈয়দ হকের কবিতা শোনার জন্য বেঁচে থাকতে চাই।’ জনসমক্ষে সেটাই ছিল রফিক আজাদের শেষ বক্তব্য।
এর পরদিন সম্মাননাগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হলো। মানুষে মানুষে ভরে গেল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলের আসনগুলো। সেই সংবর্ধনায় সৈয়দ হক বললেন, ‘আমার মাথায় এখনো কত কাজ! এখনো কত সব নতুন নতুন পরিকল্পনা। আমি লালনের মতো এক শ ষোলো বছর বেঁচে থাকতে চাই। নইলে সব কাজ শেষ হবে না।’
এরপর শুরু হলো বইমেলার প্রস্তুতি। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই সৈয়দ হকের কাশি বেড়ে গেল। ১৯ জানুয়ারি বারডেম হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হলো। কাজ ফেলে হাসপাতালে আসতে হলো বলে আনোয়ারা সৈয়দ হককে বললেন, ‘এসব বাড়াবাড়ি!’ ফুসফুসে প্রদাহ বলেই ভাবলেন ডাক্তাররা। একবার সিটিস্ক্যান করালেই সেটা জানা যেত ক্যানসার। একসময় বাড়ি ফিরে এলেন ঠিকই, কিন্তু ১০ এপ্রিল আবার ফিরে গেলেন বারডেম হাসপাতালে। সিটিস্ক্যানে ধরা পড়ল তাঁর ফুসফুসে ক্যানসার। ১২ এপ্রিল জানা গেল সে খবর। তবে সৈয়দ হক তা জানতেন না। তিনি তখনো ঢাকা ক্লাবের লাইব্রেরি থেকে বনফুলের ‘জঙ্গম’ বইটি আনতে বলছেন আনোয়ারা সৈয়দ হককে। মার্ক টালির গল্প করছেন। দুপুরের দিকে বারডেমের অধ্যাপক আজাদ আরও কয়েকজন ডাক্তারকে নিয়ে সৈয়দ হকের ঘরে এলেন। ডা. আজাদ এ সময় সৈয়দ হককে জানালেন, তাঁর শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে।
এ কথা শুনে সৈয়দ হক পাথরের মতো মুখ করে বসে রইলেন। লালনের মতো এক শ ষোলো বছর বাঁচা হলো না, বুঝলেন তিনি।
সূত্র: আনোয়ারা সৈয়দ হক, বাসিত জীবন, পৃষ্ঠা ১৪৪-১৪৫