সরকারি জায়গা দখল করা হলে সেই জায়গা আবার মুক্ত করার খবরও আসে—এ রকম ঘটনা বিরল। মাদারীপুরের কুমার নদে জেগে উঠেছিল চর। সেই চর দখল করে নিয়েছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি অবশ্য বলেছেন, তিনি নাকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছেন। কেন তিনি এই চরের জমি দখল করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে: ‘আমি প্লট করার জন্য মাটি ভরাট করিনি। ভরাট করা জায়গাটিতে ফুলের বাগান নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল।’
চেয়ারম্যান সাহেব সম্ভবত বলতে চাইছেন, এই জায়গা দখল করার ক্ষেত্রে তাঁর সদুদ্দেশ্য ছিল। তিনি মোটেই লোভের বশবর্তী হয়ে প্লট করে জায়গা বিক্রির ধান্দা করেননি, বরং এলাকাকে ফুলে ফুলে সুশোভিত করার একটা অভিপ্রায় তাঁর মনে কাজ করছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব ভুলে গিয়েছিলেন, চরটি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি নয়। সেই চরের জমি ব্যবহার করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। যে জমি নিজের নয়, সেই জমিতে ‘জনহিতকর’ কাজ করা হলেও তা যে অবৈধ হয়, সে কথা একজন ইউপি চেয়ারম্যান জানবেন না, এ তো হতে পারে না। তাই চরের জমি দখলের ব্যাপারে তাঁর দেওয়া সাফাই ধোপে টেকে না।
এ ধরনের অবৈধ ঘটনা ঘটতে পারে তখনই, যখন দখলকারী বিশ্বাস করেন, গায়ের জোরে কোনো অপকর্ম করলেও তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে না। ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে প্রশাসনের নানা অলিগলির সন্ধান তাঁর জানা আছে। কোথায় কাকে কীভাবে নিশ্চুপ রাখা যাবে, সেই ছলাকলাও নিশ্চয়ই তিনি জানেন। সুতরাং, নিতান্তই পরোপকারের দোহাই ধোপে টিকছে না। তাঁর এই দখলদারিত্ব টিকল না ইউএনওর তৎপরতার কারণে। ইউএনও বলেছেন, ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশে অনেক বড় বড় চুরি-বাটপারির ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো রক্ষকেরাই ভক্ষক হয়। পেশিশক্তি আর ঘুষ-দুর্নীতির মেলবন্ধন হলে অপকর্ম করেও ঝাড়া হাত-পা থাকা যায়। কেউই জবাবদিহি চাইতে আসে না। মনে হতে পারে, সেই সব বড় বড় চুরিচামারির বিরুদ্ধে কঠোর না হয়ে এসব ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে লেখার অর্থ বড় চোরদের ছাড় দিয়ে ছিঁচকে চোরদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আসলে চুরি বড় হোক ছোট হোক, মূল ব্যাপার হলো চুরি। দখল বড় হোক ছোট হোক, মূল ব্যাপার হলো দখল। যেকোনো দখলের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে হবে। প্রশাসনের কোনো পর্যায় থেকেই যেন চোর-বাটপার-দখলদারেরা মদদ না পায়, সেটাই নিশ্চিত করা দরকার। ছোট দখলদারদের শায়েস্তা করার সঙ্গে সঙ্গে বড় দখলদারদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। নইলে বোঝা যাবে, বড়লোক দখলদারেরা তাদের প্রভূত সম্পদের কারসাজিতে প্রশাসনকে নতজানু করে রাখতে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়। সেটাই সহজ করতে হবে। ছোট ছোট ঘটনায় শাস্তি দিয়ে তারই সূত্রপাত হোক।