হোম > ছাপা সংস্করণ

‘হত্যার পর চারবাটির খালে ভাসিয়ে দেওয়া হতো লাশ’

নেসার উদ্দিন, ফুলতলা

খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নে পিপরাইল খাল। এ খালের অদূরে জামিরা বাজার। ১৯৭১ সালে এখানে স্থাপিত হয়েছিল রাজাকার ক্যাম্প। এখানে রয়েছে খাল পারাপারের জন্য চারবাটি ঘাট। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ঘাটে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে ওই খালে ভাসিয়ে দিত রাজাকারেরা। এ কারণে ঘাটটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকেই খুলনার বিভিন্ন থানা ও গ্রামে পর্যায়ক্রমে পাকিস্তানি বাহিনী, রাজাকার ও দোসরদের অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়। অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের ঘটনাও ঘটানো হয়। ডুমুরিয়ার ধামালিয়া ইউনিয়নে তারা ছিল সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই ডুমুরিয়ায় নকশালের অবস্থান শক্ত ছিল।

তারা শ্রেণিশত্রু হত্যার নামে এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তবানদের হত্যা ও তাদের ধন সম্পদ লুটপাট করত। অন্যদিকে উঠতি বয়সের তরুণ ও বেকারদের চটকদার স্লোগানে আকৃষ্ট করে তাদের দলে ভেড়াতো। ফলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ সুসংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে

অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের পর তাদের সঙ্গে নকশালের স্বার্থের সংঘাত বাঁধে। নকশালের বাধার কারণে রাজাকারেরা আগস্ট মাস পর্যন্ত ধামালিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে পিস কমিটি ও রাজাকার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে ধামালিয়ায় হামলা চালালে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে গ্রামবাসী অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এ সময় তারা ব্যাপক লুটপাট ও ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রাজাকার ও পিস কমিটির সদস্যরা প্রতারণামূলক এক কৌশল অবলম্বন করে।

তারা বিভিন্ন স্থানে সভা করে এলাকার মানুষকে আশ্বস্ত করে যে, তারা যদি আত্মসমর্পণ করে তবে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোনো প্রকার ক্ষতি করা হবে না। সে অনুযায়ী এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষ তাদের সহায়-সম্বল রক্ষার্থে জামিরা রাজাকার ক্যাম্পে এসে আত্মসমর্পণ করে।

এ সময় রাজাকারেরা তাদের মধ্য থেকে শতাধিক যুবক বেছে নিয়ে পিপরাইল চারাবাটি ঘাটে এনে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে পিপরাইল গ্রামের জামাল সরদার, জালাল বিশ্বাস, ওহাব আলী গাজী, আবু বকর মোল্লা, আলী গাজী, আহম্মদ ফকির, আজাহার মোল্লা, আব্দুল জলিল, আলী হাফেজ গাজী, সরব মোল্লা, গোলাম মোস্তফা আকুঞ্জি, খোকা মোল্লা ও যশোরত খাঁ, ডাউকোনা গ্রামের গোলাম নবী ও ইমান আলী, কাটেঙ্গা গ্রামের আফছার চৌধুরী, সিদ্দিক মোল্লা, নুরুদ্দিন মোড়ল, বাবর আলী হালদার ও হাফেজ হালদারসহ ৩০ জনের পরিচয় পাওয়া গেলে আরও অনেকের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তবে নিহত আহম্মদ ফকিরের ভাইপো আবদুস সালাম ও জালাল উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে হানিফ বিশ্বাস বলেন, রাজাকারেরা এ ঘাটে ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য লোককে রশি দিয়ে বেঁধে এনে গুলি করেছে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সেদিনকার লোমাহর্ষক ঘটনা মনে পড়লে আজও গা শিউরে উঠে।

এ ব্যাপারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী জাফর বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর গত ২০২০ সালে প্রথম চারবাটি ঘাটকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৭১ সালের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, গত বছর বধ্যভূমির স্বীকৃতি পাওয়ার পর স্মৃতিফলক স্থাপন ও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বছর যাতায়াতের জন্য রাস্তাকে প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে সকাল ১১টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জামিরা পিপরাইল এলাকায় অবস্থিত চারবাটি ঘাট বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এ সময় উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ