গণসংগীত ছিল তাঁর প্রাণ। তবে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে সংগীতে তাঁর জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন। ‘কার বউ’, ‘আপন দুলাল’, ‘রহিম বাদশা ও রূপবান’, ‘বেহুলা’সহ অনেক ছবির গানেই পাওয়া যাবে তাঁর স্পর্শ।
বাঁচার তাগিদেই পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে ফিল্মি দুনিয়ার কায়দা-কানুনে পোক্ত হয়েছেন। তিমিরবরণের মতো গুণী শিল্পীকে পেয়েছিলেন গুরু হিসেবে। এ সময় সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর রোজগার ছিল ভালো। কিন্তু রোজগারের সর্বস্ব তিনি উজাড় করে দিতেন আড্ডায়। অসম্ভব হাতখোলা মানুষ ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নামে যে ছবি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন জহির রায়হান, তার সংগীত পরিচালক ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। এই ছবির একটি ছোট চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, বেবী ইসলামের ‘ক খ গ ঘ ঙ’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিটি শেষ করা হয়নি, এর আগেই শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। জহির রায়হান চলে গেলেন ভারতে। অন্যদের বলে গেলেন, তোমরা ঢাকায় থাকো, এখানে অনেক কাজ আছে, তোমাদের কী করতে হবে, পরে তা জানাব।’
১৯৭১ সালের মে মাসে নুরুল হক বাচ্চু, জাকারিয়া হাবিব আর আলতাফ মাহমুদ যাচ্ছিলেন গুলশানে নায়করাজ রাজ্জাকের বাড়িতে। গাড়িটা ছিল আলতাফ মাহমুদের মরিস অক্সফোর্ড। চালাচ্ছিলেন তিনি নিজে। পথে ফার্মগেটের কাছে পাকিস্তানি সৈন্যরা গাড়ি থামাল। সৈন্যদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় রাজাকারেরা। সৈন্যরা গাড়ির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমলোক কৌন হ্যায়?’
আলতাফ মাহমুদ জবাব দিলেন, ‘হামলোক বাঙালি হ্যায়।’
সৈন্যরা ‘স্লামালেকুম’ বলে ছেড়ে দিল গাড়ি।
খানিক পথ পার হলে নুরুল হক বাচ্চু জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলতাফ ভাই, এটা কী বললেন? শালারা যদি আমাদের ধরত?’
প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আলতাফ মাহমুদ জবাব দিলেন, ‘আমি কী বলতাম, হামলোক পাকিস্তানি হ্যায়?’
সূত্র: নুরুল হক বাচ্চু, আলতাফ মাহমুদ এক ঝড়ের পাখী, পৃষ্ঠা ৪২-৪৪