পণ্ডিত রবিশঙ্কর ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সংগীতজ্ঞ ও বিখ্যাত সেতারবাদক। তিনি তাঁর সেতারবাদনের জন্য ছিলেন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। তাঁর বড় ভাই ছিলেন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর।
রবিশঙ্কর ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল রবীন্দ্রশঙ্কর চৌধুরী। মাত্র ১০ বছর বয়সে দাদা উদয়শঙ্করের ব্যালে ট্রুপে যোগ দিয়ে ইউরোপ সফর করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে নৃত্য ছেড়ে যন্ত্রসংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন তিনি। মাইহার ঘরানার শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন প্রখ্যাত সেতারশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে। এরপর তাঁর কাছ থেকে তিনি ধ্রুপদ, ধামার ও খেয়ালের তালিম নিয়েছিলেন।
এরপর তিনি বোম্বে গিয়ে ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে কবি ইকবালের ‘সারে জাঁহা মে আচ্ছা’ কবিতার সুর করেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার জন্য ১৯৪৯ সালে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র নয়াদিল্লি শাখার সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পান। সত্যজির রায়ের পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার—এই তিনটি ছবিরও সুরকার ছিলেন তিনি।
১৯৫৬ সালে লন্ডন থেকে রবিশঙ্করের তিনটি রাগের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকো সংগীত উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং একই সঙ্গে তিনি কিছু পাশ্চাত্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনাও করেন। ওই বছরেই তিনি বোম্বেতে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক প্রতিষ্ঠা করেন।
রবিশঙ্কর সংগীত জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার গ্র্যামি জিতেছেন তিনবার। চতুর্থবার এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু ফল ঘোষণার আগেই মারা যান তিনি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক পরম সুহৃদ ছিলেন তিনি।
জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যার্থে প্রথম এই চ্যারিটি কনসার্ট। ওই কনসার্টে গান গিয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, লিওন রাসেল, ব্যাডফিঙ্গার, বিলি প্রেস্টন ও রিঙ্গো স্টার।