কিছুক্ষণের জন্য দ্বিধান্বিত হয়ে গেলেন সুফিয়া ইব্রাহিম। সামনে যমদূতের মতো খাড়া সিটি এসপি মাসুদ মাহমুদ। পারিবারিকভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচিত তিনি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য সুফিয়া ইব্রাহিম শামিল হয়েছেন, এ কথা সিটি এসপির মাধ্যমে বাড়ি পৌঁছে যেতে দেরি হবে না। কী করবেন এখন তিনি?
ভাববার জন্য খুব বেশি সময় নিলেন না সুফিয়া। এগিয়ে চললেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন মেয়ে। মাসুদ মাহমুদ তাঁদের দেখলেন। তিনি কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। কিন্তু সুফিয়া তখন বুঝে নিয়েছেন, এই প্রতিবাদ একটি স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখবে।
ভাষা আন্দোলনের সময় ছাত্রীদের চলতে হতো অনেক নিয়ম মেনে। তখনকার দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। কথা বলতে হতো প্রক্টরের মাধ্যমে। নইলে ১০ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষকেরা ক্লাসে যাওয়ার সময় ছাত্রীদের কমনরুম থেকে ডেকে নিয়ে যেতেন। ছাত্রীরা মাথায় কাপড় দিয়ে কেউ কেউ বোরকা পরে ক্লাস করতেন। মেয়েরা বসতেন ক্লাসের সামনের সারিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তখন থাকতেন চামেলি হাউসে (বর্তমান রোকেয়া হলের পাশে)। এ ছাড়া ছাত্রীদের জন্য আর কোনো থাকার জায়গা বা আবাসস্থল ছিল না। সে সময় কোনো আন্দোলনে যোগদানের ব্যাপারে সামাজিক প্রতিকূলতা ছিল। হলের বাইরে যে ছাত্রীরা থাকতেন, তাঁদের বেশির ভাগই এই আন্দোলনে যোগ দেননি। ব্যতিক্রম ছিলেন বিচারপতি ইব্রাহিমের মেয়ে সুফিয়া ইব্রাহিম (আহমদ)। হলের বাইরে থেকেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন এই আন্দোলনে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সময় মেয়েদের প্রথম মিছিলটি বেরিয়েছিল শাফিয়া খাতুনের নেতৃত্বে। সুফিয়া ইব্রাহিম বের হন মেয়েদের দ্বিতীয় মিছিলে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শামসুন্নাহার আর সারা তাইফুর।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এভাবেই অমলিন হয়ে ছিল সুফিয়া ইব্রাহিমের মনে।
সূত্র: ভাষা আন্দোলন, সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন, পৃষ্ঠা ২৬৮-২৬৯