অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন বাঙালির শেকড়সন্ধানী প্রাজ্ঞ মনীষী, শিক্ষাবিদ, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী, লেখক ও গবেষক।
তাঁর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই তাঁর পরিবার প্রথমে বাংলাদেশের খুলনায় আসে, এরপর ঢাকায় স্থায়ী হয়। একদিকে মেধা, অন্যদিকে বাঙালিত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং ১৯৫৭ সালে এমএ পাস করেন। এরপর মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন।
তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বাংলা ভাষারূপ পর্যবেক্ষক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় শিক্ষা কমিশন ‘কুদরাত-এ-খুদা’র সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১৯৯১ সালের গণ-আদালতের অন্যতম অভিযোগকারী ছিলেন তিনি।
তিনি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।
জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চার জন্য গবেষণার চেয়ে সময়ের উৎকণ্ঠাকাতর প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজার তাগিদ তিনি অনুভব করেছেন বেশি। সে জন্য রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ইতিহাসে তৃষ্ণার্ত পর্যটকের মতো ছুটে বেড়িয়েছেন। শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালিত্বের চেতনা তাঁর লেখকসত্তাকে প্রসারিত করেনি; বরং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যাতে বিপথে চলে না যায়, তার জন্য আজীবন সক্রিয় ছিলেন লেখনী এবং প্রতিবাদী ক্রিয়া-কর্মে।
তিনি পদ্ধতিগত গবেষণায় বিশ্বাসী ছিলেন। আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে তাঁর সম্পর্কে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আনিসুজ্জামান যে রকম গুছিয়ে গবেষণা করতে পারে, সে রকম খুব একটা দেখা যায় না।’