ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর এলাকায় একটি রাস্তার দাবি ছিল শত বছর ধরে। স্বাধীনতার পর থেকে বহু জনপ্রতিনিধি রাস্তাটি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে রাস্তাটি তৈরি করতে গ্রামবাসী নিজেরাই এগিয়ে এলেন।
কেউ জমি, কেউ অর্থ, আবার কারও স্বেচ্ছাশ্রমে আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের রাস্তা বানিয়ে নজির সৃষ্টি করলেন পরমানন্দপুর গ্রামবাসী। এসব মিলে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো পরমানন্দপুরে। আর নতুন এই রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় উপকার হয়েছে পাঁচ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের।
উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নে গত রোববার সন্ধ্যায় আড়াই কিলোমিটার নতুন রাস্তা উদ্বোধন করা হয়। গ্রামবাসীর উদ্যোগে উপজেলার পরমানন্দপুর থেকে ষাটবাড়িয়া পর্যন্ত এই নবনির্মিত রাস্তাটির উদ্বোধন করেন উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কাউসার হোসেন। গ্রামবাসী রাস্তাটিকে স্বপ্নপুরীর রাস্তা বলে উল্লেখ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বহু জনপ্রতিনিধি রাস্তাটি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে এবার গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। দুই গ্রামের ৪৭ জন কৃষক তাঁদের জমির একাংশ দান করেন রাস্তার জন্য। এরপর গ্রামবাসী মাটি ভরাটের জন্য ৮ লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন।
তাঁরা জানান, ১৫ দিনে খননযন্ত্রের পাশাপাশি গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ৯ ফুট প্রস্থের রাস্তাটি নির্মাণ করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে রাস্তাটিকে রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। নতুন রাস্তার উদ্বোধন নিয়ে গ্রামবাসীর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না।
এ ব্যাপারে পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলফাজ উদ্দিন বলেন, একসময় পরমানন্দপুর ও ষাটবাড়িয়া গ্রামের মানুষকে খেতের আইল দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। এতে তাদের অনেক ভোগান্তি হতো। যার কারণে নতুন রাস্তা নির্মাণ গ্রামীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
এ ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা হাজি সুজন মাহমুদ, ইসহাক মিয়া, আবুল কাশেম, আবুল কালাম, আলমগীর মিয়া ও আলফাজ উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসী বছরের পর বছর চলাচলের অসুবিধায় ছিলেন। সবাই মিলে নিজের জায়গা দিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি নির্মাণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।
পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রামবাসী রাস্তাটি তৈরি করে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আমার ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে রাস্তাটির উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’