মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে কৃষিজমির টপ সয়েল বা ওপরের অংশের উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। টপ সয়েল প্রতিবছর ভাটায় যাওয়ার কারণে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন কম হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী বা পতিত জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করতে পারবে না। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারী যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইন লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বিভিন্ন সময় ভাটার মালিকেরা ফসিল জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিশাল আকারের উঁচু উঁচু মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এসব মাটি ফসিল জমি থেকে কাটা হয়েছে।
আগামী মৌসুমে স্তূপের মাটি দিয়ে ইট তৈরি করার জন্য জমা করা হয়েছে। যেসব জমি থেকে মাটি কাটা হয়েছিল, এসব জমির ধানগাছ লাল রং ধারণ করেছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ভাটার মালিকেরা স্বল্প টাকার বিনিময়ে জমির মালিকের কাছ থেকে জমির উপরিভাগের মাটি কেনেন। যে জমি থেকে মাটি কাটা হয়েছে, এই ফসলি জমিতে আগের মতো আর ফসল উৎপাদিত হয় না; বিশেষ করে ধানি জমিতে ধান গাছের চারা রোপণের কিছুদিন পর লাল হয়ে যায় এবং অন্যান্য জমির তুলনায় অর্ধেক ফলন হয় বলে তাঁরা জানান।
টপ সয়েলের বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, জমির টপ সয়েল যদি কেটে ফেলা হয়, তাহলে জমির উর্বরতা কমে আসে। ফসল উৎপাদনে মাটির যে উপাদান প্রয়োজন, এগুলো জমির টপ সয়েলের মধ্যে রয়েছে। ইটভাটায় জমির প্রথম অংশের ২ থেকে ৩ ফুট মাটি কেটেক নেওয়া হয়, যা ফসল উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। কৃষকদের মাটি বিক্রি না করার অনুরোধ জানান তিনি।
মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ফসিল জমি থেকে মাটি কাটা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইটভাটার বিভিন্ন বিষয় আমরা দেখলেও বিষয়টি মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইনের সংশ্লিষ্টরা দেখেন। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেব। জমির মালিকেরা টাকার বিনিময়ে মাটি বিক্রি করেন, এ জন্য তাঁরাও কোনো অভিযোগ করেন না।’