বয়স তখন পনেরো। মৃণাল সেন থাকেন ফরিদপুরে। দেশভাগের আগের কথা। সে সময় ফরিদপুর শহরে লাল-বাল-পালের প্রভাব। লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক আর বিপিনচন্দ্র পাল। মৃণাল সেনের বাবা দীনেশচন্দ্র সেন পেশায় ছিলেন আইনজীবী। জেলা কোর্টের বার কাউন্সিলের নেতা ছিলেন। সে সময় যেসব বিপ্লবীর ফাঁসি হয়েছে, তাঁদের অনেকেরই বন্ধু ছিলেন দীনেশ সেন।
সে সময় একদিন জুবিলি পার্কের বিশাল জনসভায় গেলেন মৃণাল সেন। সেখানে অনেক যুবকের ভিড়। ফরিদপুর শহরে এসেছেন হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। নেতাজি সুভাষ বসুকে নিয়ে করা তাঁর একটি মন্তব্যে শোরগোল লেগে যায় সেখানে। সেই গোলমালের একজন ছিলেন মৃণালের মেজ ভাই। মেজ ভাই নাটক করতেন। শিবাজিকে নিয়ে করা একটি নাটকে আফজল খানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অন্যদিকে ছত্রপতি শিবাজিকে নিয়ে লিখতেন ইতিহাসের শিক্ষক মশাই। তিনি রাজনীতিও করতেন।
শ্যামাপ্রসাদ যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন ইতিহাসের এই শিক্ষক ছিলেন তাঁর মুগ্ধ শ্রোতা। বক্তৃতা ভালোই চলছিল। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ যখন বললেন, ‘সুভাষচন্দ্র বসু মুসলিম লিগের সঙ্গে এবং তা হিন্দুদের ও দেশের পক্ষে ক্ষতিকর’, তখন জনতা হইহই করে উঠল। এই হইহই যাঁরা করলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মৃণালের মেজদা।
ইতিহাসের শিক্ষক মশাই তখন অন্যদের সঙ্গে মিলে গোলমালকারীদের শায়েস্তা করতে চাইলেন। হঠাৎ মৃণাল দেখলেন, মাস্টারমশাই তাঁর মেজদার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। শিক্ষকের বড় টাকটা তখন মৃণালের চোখের সামনে। মৃণাল রাগ সামলাতে পারলেন না। হাতে ধরা ছাতার বাঁট দিয়ে সজোরে মাস্টার মশাইয়ের টাকে আঘাত করলেন। ঘটনাটি ঘটিয়ে ভয়ও পেলেন মৃণাল। কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ইতিহাসের মাস্টারমশাই জানতে পারবেন না, কে তাঁর টাকে আঘাত করেছিল!
সেটা ১৯৩৮ সালের কথা। কাজটা যে অন্যায় হয়েছিল, সেটা স্বীকার করেন মৃণাল। কিন্তু মেজদার প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজটা করেছিলেন তিনি।
সূত্র: মৃণাল সেন, তৃতীয় ভুবন, পৃষ্ঠা ১১-১২