রাজশাহীর চারঘাট-বাঘার শতবর্ষী আড়ানী রেলসেতুটি যেন এক আতঙ্কের নাম। দীর্ঘদিন নড়বড়ে অবস্থায় থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। মাঝেমধ্যেই সেতুটিতে তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় সমস্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে ট্রেন। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ট্রেনযাত্রীরা।
রাজশাহীর আড়ানী রেলসেতুতে লাইন ভাঙা থাকায় গতকাল সকালে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। তবে অস্থায়ী গেটম্যান লায়েব উদ্দীনের বুদ্ধিমত্তায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন রাজশাহীগামী ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিন শতাধিক যাত্রী।
মালবাহী ট্রেনে সেতুর রেললাইন ভেঙে যাওয়ায় সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। পরে রাজশাহী রেলের পার্মানেন্ট ওয়ে ইন্সপেক্টরের (পিডব্লিউআই) অফিস থেকে রেল সরঞ্জাম নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে লাইন মেরামত করে ট্রেন যোগাযোগ চালু করা হয়েছে।
রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয় ১৯৩০ সালে। ট্রেন চলাচলের সুবিধার জন্য এরও আগে ১৯২৪ সালের দিকে বড়াল নদের ওপড়ে আড়ানী রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। পরে আর কখনো সেতুটির বড় ধরনের সংস্কার করা হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ১৩টি ট্রেন প্রতিদিন দুবার করে ২৬ বার রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।
গতকাল শনিবার সকালে আড়ানী রেলসেতুতে গিয়ে দেখা যায়, রেলসেতুর পশ্চিম পাশে রেললাইনের জয়েন্টের স্থানে ১২ ইঞ্চি ভেঙে গেছে।
২৬২টি স্লিপারের মধ্যে ৬০টি স্লিপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গতকাল সেতুতে সমস্যার কারণে আটকে থাকা ট্রেনের চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরোনো এই সেতুর ওপর দিয়ে তাঁরা সাবধানে, ধীরগতিতে ট্রেন চালান। গতি থাকে ২৫-৩০ কিলোমিটার। এরপরও এটি কেঁপে ওঠে। দুর্ঘটনার শঙ্কা তাঁরাও করেন।
রেলসেতুসংলগ্ন গেটম্যান ও স্থানীয় কুশাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা লায়ের উদ্দিন বলেন, কাল লাল নিশানা দিয়ে ট্রেন না থামালে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল।
আড়ানী রেলসেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বলেন, আড়ানী রেলসেতুটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি হলেও এখনো ভালো অবস্থায় আছে। বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়নি, এটা সঠিক। তবে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক মেরামত করা হয়। রেলসেতুর সংস্কারকাজ এখনো চলমান আছে।