বিনোদন দুনিয়ায় নতুনভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিপফেক। তারকাদের ছবি ও ভিডিও কারসাজি করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেটে। এতটা সূক্ষ্মভাবে এসব তৈরি করা হচ্ছে যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসল-নকলের পার্থক্য করা কঠিন। প্রযুক্তির এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দেশ-বিদেশের তারকারা।
ডিপফেক নিয়ে বড়সড় আলোচনা তৈরি হয় গত নভেম্বরের শুরুর দিকে। দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। যেখানে অন্য এক নারীর মুখের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয় রাশমিকার মুখ। প্রথমে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি ভিডিওটি আসল কি না। কয়েক দিন ইন্টারনেটে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে। অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে অনেক তারকা এ বিষয়ে সরব হন। মুখ খোলেন রাশমিকাও।
রাশমিকা বলেন, ‘ডিপফেক ভিডিও ছড়ানোর প্রবণতা বেশ কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এটাকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছি, যেটা মোটেও উচিত নয়। এটা সত্যিই খুব ভয়ানক। আমার সঙ্গে এটা যদি স্কুল বা কলেজজীবনে ঘটত, কীভাবে এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতাম জানি না। আমি আনন্দিত যে, এ ঘটনায় বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। এখন বুঝতে পারছি, এটা নিয়ে কথা বলা কতটা জরুরি। আমি প্রত্যেক মেয়েকে বলতে চাই, কারও সঙ্গে এ রকম ঘটলে তাঁরা যেন চুপ না থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।’
রাশমিকার এ ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে ডিপফেকের আক্রমণের শিকার হন বলিউডের তিন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ, কাজল ও আলিয়া ভাট। এরপর স্বাভাবিকভাবেই বিনোদন দুনিয়ায় ডিপফেক নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষ করে নারী তারকারা আতঙ্কিত ডিপফেকের এই ভয়াবহতা নিয়ে। কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রীরাও।
—আশনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী
শুধু তারকাদের জন্য নয়, একজন নারী বা যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি হলে সেটি অবশ্যই দুঃখজনক। সবার জন্যই এটা উদ্বেগের। আমার মনে হয়, যাঁরা সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা অবশ্যই ব্যাপারটাকে দক্ষতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করবেন।
—তাসনিয়া ফারিণ, অভিনেত্রী
এ ব্যাপারে তারকাদের পূর্ব প্রস্তুতি কী হতে পারে? আসলে এখানে তারকা বা যেকোনো নারী বা পুরুষের কোনো হাত নেই। যেটা অবশ্যই আমাদের করতে হবে, এটার জন্য শক্ত আইন করা প্রয়োজন। কারণ, এটা নতুন এক উদ্বেগের বিষয়।
শুধু আইন প্রণয়ন নয়, সেটার প্রয়োগও দরকার। যদি দেখা যায় ডিপফেক ভিডিও বা ছবি ছড়িয়ে কারও সম্মানহানি হচ্ছে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে সেটা সবার জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। যেন পরবর্তী সময়ে কেউ আর এমন কাজ করার সাহস না দেখায়। আর সামাজিক সচেতনতা অবশ্যই জরুরি। আমরা নিজেরা সেটা নিয়ে হাসাহাসি না করে, বিষয়টা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা শেয়ার করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
—রুনা খান, অভিনেত্রী
একজন নারীকে আক্রমণ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, তাঁকে চারিত্রিকভাবে হেয় করা। চরিত্র বলতে সাধারণত সবাই শুধু শরীর বোঝে, শারীরিক সম্পর্ক বোঝে। তবে আমি যেটা বুঝি, চরিত্র একটা মানুষের তখনই খারাপ হয়, যখন সে ঘুষ খায়, ধর্মীয় লেবাস পরে মিথ্যা কথা বলে, অন্যের হক মেরে খায় বা সম্পর্ক ভেঙে গেলে যখন সে সঙ্গীর নামে অপপ্রচার করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটিয়ে তাঁদেরই বেশি চরিত্রহননের চেষ্টা করা হয়, যাঁদেরকে মানুষ বেশি চেনে।
এ রকম একটা বাস্তবতা থেকে এই যে নতুন প্রযুক্তি, বিকৃত চিন্তায় বিশ্বাসীরা এতে আরও বেশি আনন্দ পাবে। এ ছাড়া আর কিছুই হবে না। এতে করে মেয়েদের কাজ, মেয়েদের পথচলা, তাঁদের জীবনযাপন—কিছুই থেমে থাকবে না। কারণ, বিষয়টা মিথ্যা। নারীদের সম্পর্কে এ রকম অসংখ্য মিথ্যা মুখরোচক গল্প করে মানুষ মজা পায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা বিভিন্ন তারকার ছবিতে উল্টাপাল্টা কমেন্ট করে, এটা যেমন বিকৃত মানসিকতা। ডিপফেক যারা করছে, এটাও বিকৃত মানসিকতা।