গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের পুরোনো গ্যারেজের কার্নিশ ধসে রংমিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
রংমিস্ত্রির নাম দীপক রায় (২৩)। তিনি উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের পুটিমারি গ্রামের কালিপদ রায়ের ছেলে।
উপজেলা পরিষদের মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শাওন বলেন, ‘আমরা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে কয়েকজন বন্ধু মিলে মাঠে বসেছিলাম। এমন সময় ইউএনও স্যারের বাসার ভেতর থেকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক বাসার ভেতরে এসে দেখি গ্যারেজের বিল্ডিংয়ের লিনটেন (কার্নিশ) ভেঙে একজনের গায়ের ওপরে চাপা পড়েছে। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে কার্নিশ সরাই।’
দীপকের সঙ্গে কাজে এসেছিলেন তাঁর ছোট ভাই খোকন রায়। খোকন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি দাদার পেছনে কাজ করতেছিলাম। দাদা সে সময় গ্যারেজের লিনটেনে ঝাড়ু দিতেছিল। এমন সময় লিনটেন ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। আমার দাদা আমার সামনে লিনটেনে চাপা পড়ি মারা যায়।’
দীপক গঙ্গাচড়া সরকারি কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষ এবং খোকন খলেয়া খাপড়ীখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ছেলের লাশ দেখে দীপকের বাবা কালিপদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সংসারোত অভাব। সে জন্যে দুই ভাই অনেক কষ্ট করি পড়ালেখার খরচ জোগাড় করে। পড়ালেখার খরচ, সংসারের খরচ জোগানোর জন্য ছয় মাস থাকি রংমিস্ত্রির কাজ করে। আজ প্রায় ১৫ দিন থাকি গঙ্গাচড়া ইউএনও অফিসে কাজ করেছো। আজকে দুই ভাইয়ের বাড়ি থাকি সকালে কাজত আইসে। কাজত আসি মোর বাপ আজকে লাশ হইল। মোর বাপটার কি হইবে। মই যদি জানুং হয় মোর বাপটা মোখ ছারি চলি যাইবে, তাহইলে মই মোর বাপ টাক আজকে বাড়িত থাকি বের হবারে দিনুং না হয়।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও রংপুর-১ আসনের সাংসদ মসিউর রহমান রাঙ্গা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার।
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস পরে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
গঙ্গাচড়া উপজেলার ইউএনও এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি অস্বাভাবিক দুর্ঘটনা। আমি খুবই মর্মাহত।’
এ বিষয়ে ওসি সুশান্ত কুমার জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।