হোম > ছাপা সংস্করণ

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

রহমান মৃধা

কিছুদিন আগে জার্মানির একটি কসাইখানার অনেক কর্মী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এই কসাইখানায় কাজ করেন ৭০০ কর্মী। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে বিভিন্ন পশুর মাংস এখান থেকে রপ্তানি হয়, তার মধ্যে গরুর মাংস উল্লেখযোগ্য। হঠাৎ এতগুলো কর্মীর আক্রান্তের বিষয়টি জার্মানি সরকার তদন্ত করছে এবং একই সঙ্গে কারখানা মনিটরিং থেকে শুরু করে পশুর লালনপালন পদ্ধতি, পরিবেশও খুঁটিয়ে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে পরিষ্কার যে একটি কোম্পানিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে বিধায় সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টির ওপর তদন্তে নেমেছে।

 
বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে গবাদিপশুর খাবারে নানা ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে ভালো উৎপাদন পেতে। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, তা জেনেশুনেও অনেকে এর ব্যবহার করছে। আমি সুইডেনের দোকানে ঢুকলে প্রথমে খুঁজি ইকোলজি খাবার, কারণ সেটা প্রাকৃতিক। বাকি খাবার যা আসছে সাউথ আমেরিকা বা ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে, সে খাবারের ওপর আমার কোনো ধারণা নেই। সে ক্ষেত্রে আমি যা খাচ্ছি, জানি না এর মধ্যে শতকরা কত ভাগ ন্যাচারাল।

তারপর গোটা মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহায় লাখ লাখ গবাদিপশু কোরবানি করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই গরু। এসব গরুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে বহু খামারি গরু মোটাতাজা করেন। পেশাদার ও সৎ খামারিরা সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে, অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট করেন।

অন্যদিকে একশ্রেণির অসাধু খামারি বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করেন। তারা স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ খাইয়ে অথবা স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করেন। এ ছাড়া হরমোন প্রয়োগ করেও গরুকে মোটাতাজা করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতে এর চর্চা হয়ে থাকে। এখন ভারতের হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী মানুষ গোপূজারি, গরুর গোশত খায় না, তবে অনেকে গোমূত্র পান করেন। শুনেছি আরব দেশেও অনেকে উটের মূত্র পান করেন। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যক্ষভাবে গবাদিপশুর শরীরে যা ঢোকাচ্ছি, তার অংশবিশেষ পরোক্ষভাবে নিজেরাও গ্রহণ করছি।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে গবাদিপশুর পাশাপাশি এ সমস্ত ওষুধ অল্প বয়সের মেয়েদের শরীরে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলোর বেশির ভাগই ইস্ট্রোজেন (প্রাইমারি ফিমেল সেক্স হরমোন)। যদিও ইস্ট্রোজেন পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই থাকে, কিন্তু সচরাচর নারীদের প্রজনন বয়সে এর মাত্রা বেশি থাকে। এটি নারীদের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য, যেমন স্তন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এর পাশাপাশি ইস্ট্রোজেনের আরও কিছু কাজ আছে। জরায়ুর আকার বৃদ্ধি করে, যোনি পিচ্ছিল করে, জরায়ুর প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি করে। অনেকের কাছে শুনেছি, বাংলাদেশের অল্প বয়সের মেয়েদের (১০-১২ বছর) কর্টিসন নামের ওষুধ দিয়ে যৌনকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি কি বাংলাদেশ সরকার জানে? এটা বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক। দুর্নীতি, ঘুষ বা মহামারি নিয়ে কথা হয়, কিন্তু শিশু যৌন ব্যবসার ওপর তেমন কোনো কথা হয় না। জানি না সরকারের এই বিষয়গুলোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করার মতো সময় আছে কি না।

বর্তমান বিশ্বে একটি জিনিস লক্ষণীয়। তা হলো গরিব অন্যায় করছে পেটের তাগিদে, অন্যদিকে বড়লোক অন্যায় করছে বিলাসবহুল জীবন পেতে। বাংলাদেশে একধরনের দুষ্ট লোক অল্প বয়সের মেয়েদের শরীরে কেমিক্যাল ঢুকিয়ে তাদের যৌন ব্যবসায় ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বিশ্বের বড়লোকেরা জেনেশুনে নিজ শরীরে ব্যবহার করছে নানা ধরনের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট। পশুপাখি ও গরিব শিশুর প্রতি যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়, তারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া কি তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ? আমরা যত অর্থশালী ও শিক্ষিত হচ্ছি, ততই অন্যায় কাজ বেশি করছি এবং মনুষ্যত্ব হারাচ্ছি। আমাদের শিক্ষা কি তাহলে ভুল শিক্ষা? তাই যদি হয়, তবে কী দরকার আছে সেই শিক্ষার?

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ