‘হারানো সুর’ ছিল সুচিত্রা সেন অভিনীত ছাব্বিশ নম্বর চলচ্চিত্র। শুরুতে সিনেমায় যখন এলেন, তখন পাত্তাই পাননি অনেকের কাছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে চলচ্চিত্রে একটা রোল পাওয়ার জন্য। কিন্তু ‘হারানো সুর’-এর সময় তিনি পরিণত এক অভিনয়শিল্পী, একজন মানুষ।
ছবিটির পরিচালক ছিলেন অজয় কর। ছবির প্রযোজনা করেন উত্তমকুমার এবং নায়কও তিনি।
অনেকেই বলে থাকেন, ‘হারানো সুর’ সিনেমাতেই সুচিত্রাকে একজন পূর্ণ অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রথম দেখা যায়। যতটা নিখুঁত হওয়া সম্ভব, ততটাই তিনি ছিলেন এই ছবিতে। উত্তম প্রযোজনা করছেন শুনে সুচিত্রা সেন নাকি বলেছিলেন, ‘তোমার এই ছবির জন্য প্রয়োজন হলে অন্য সব ছবির ডেট ক্যানসেল করব।’
সুচিত্রা সেন অভিনয়ের সময় আবেগকে ধরে রাখতে পারতেন এবং আবেগের শীর্ষবিন্দুতে উঠে তা ছেড়ে দিতে পারতেন। তাঁর আগে কেবল বাংলা সিনেমায় কানন দেবীরই এই পারঙ্গমতা ছিল। বিশদভাবে সুচিত্রাকে শট বুঝিয়ে দিতে হতো না। একটু ধরিয়ে দিলেই তিনি অনায়াসে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন।
‘হারানো সুর’ ছবিতে স্বামী যার স্মৃতিভ্রষ্ট, যার নিজের পরিচয় দেওয়ার সুযোগ নেই, এ রকম এক আকুল বেদনাবিধুর চরিত্রে সুচিত্রা সেন যে অভিনয় করলেন, তা আজও দর্শকের চোখ থেকে সরে যায়নি। এই ছবিতে একটি কালজয়ী গান ছিল, ‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার...’। অসাধারণ এই গানের চিত্রায়ণের আগে সুচিত্রা সেন পরিচালক অজয় করের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কী করব, বলুন তো?’
অজয় কর নিজেও আসলে আগে থেকে ভাবেননি, এ দৃশ্যটিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রেমের আবেগ সৃষ্টির মুহূর্তটা কেমন হবে। তিনি একটু বিব্রত হয়েই বললেন, ‘এই উদাস উদাস সিনিক ভাব, প্রেমে পড়লে মানুষের যা হয় আরকি!’ মুহূর্তকাল সুচিত্রা নীরব থাকলেন, এরপর যে শট দিলেন, তা যেকোনো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে আজীবন অমলিন হয়ে।
সূত্র: আশিসতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, মহানায়িকা সুচিত্রা, পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯