মৌলভীবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘বীর নিবাস’ তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করায় গতকাল রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রথমিক সত্যতা পা্তওয়ায় তাৎক্ষণিক দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুরে ৩৬ শতাংশ জমির ওপর চারজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য সরকারি বরাদ্দের ঘর তৈরির কাজ চলছে। এর ব্যয় প্রায় ৫৪ লাখ টাকা। প্রতিজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৯ শতাংশ জায়গায় ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
ঘর পাওয়া চারজন মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়া, খিতিশ চন্দ্র সেন, আব্দুল মালিক, আব্দুল খালিক নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ করেন ইউএনও বরাবর। অভিযোগের পর পরিদর্শনে যান সদর উপজেলার ইউএনও সাবরিনা রহমান। পরিদর্শনে অভিযোগের সত্যতা পান এবং তাৎক্ষণিক দেয়াল ভাঙার নির্দেশ দেন।
চারজন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি ঘরের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত উপহারের এ ভবনে দুর্নীতি করা হচ্ছে। যেখানে যে পরিমাণ জিনিস লাগানো প্রয়োজন সেখানে সেটা হচ্ছে না। এ জন্য আমরা ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছি। তিনি নিম্নমানের এসব কাজ ভেঙে দেন।
নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা মিস্ত্রি ইমাদ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানি এক সিমেন্ট চার বালু দিয়ে গাঁথুনির কাজ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার বলেছেন এক সিমেন্ট আট বালি দিয়ে কাজ করতে। আমরা এ নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি।’
মিস্ত্রি সাফি মিয়ার জানান ঠিকাদারের নির্দেশে তাঁরা সিমেন্ট এক বালু আট দিয়ে কাজ করেন। কিন্তু গতকাল ইউএনও এসে দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন।
এই বীর নিবাসের কাজ করছেন ঠিকাদার উজ্জ্বল আহমদ। মোবাইলে কল দিয়ে বীর নিবাসের কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কল রেখে দেন। পরবর্তীতে একাধিক বার কল দিলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।’
ইউএনও সাবরিনা রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে পরিদর্শনে যাই। এক সিমেন্ট চার বালির জায়গায় এক সিমেন্ট আট বালি দিয়ে কাজসহ নিম্নমানের কাজ হচ্ছে দেখে তাৎক্ষণিক দেয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিই। কাজও বন্ধ করা হয়।’
ঠিকাদারকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। মান ঠিক রেখে কাজ করার শর্তে পুনরায় কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি বীর নিবাস তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ করতে উপজেলাভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কমিটিতে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও রাখা হয়েছে।