চিনির বদলে মধু খান—স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এমন কথা মেনে চলতে পছন্দ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে সুন্দরবনের মধু। সুন্দরবনের মধুর কথা শুনলেই হয়তো কারও কারও মাথায় ‘খাঁটি’ শব্দটা ঘুরপাক খায়। তাই সুন্দরবন অঞ্চলের খাঁটি মধু পেতে অনেকে চড়া মূল্য পরিশোধ করতেও প্রস্তুত। এ সুযোগটা হাতছাড়া করতে চান না কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে অসাধুতার এমন একটি খবর। চিনি দিয়ে মধু বানিয়ে ‘সুন্দরবনের মধু’ বলে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন এক দম্পতি। কামাল ও মরিয়ম নামের এই দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার কৃষ্ণনগরে একটি আধা পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে চিনি দিয়ে ভেজাল মধু বানাচ্ছিলেন। শুধু চিনি নয়, চিনির সঙ্গে মেশানো হতো রাসায়নিক তরল, যেন উৎপাদিত পণ্য দেখতে অবিকল মধুর মতো হয়।
গোপনে খবর পেয়ে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থেকে ২ হাজার লিটার ভেজাল মধু, বিপুল পরিমাণ চিনি ও রাসায়নিক তরল জব্দ করেছে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কামাল পালিয়ে গেলেও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম ধরা পড়েন এবং পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে। মরিয়মের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের ভাড়াবাড়ি থেকে লুকিয়ে রাখা ২ হাজার ৫০ লিটার ভেজাল মধু জব্দ করা হয়।
পরিশোধিত সাদা চিনির চেয়ে মধু যে স্বাস্থ্যকর, তা এখন সবার জানা। আপনি যখন কোনো হাসপাতালে গিয়ে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য, আশপাশে খেয়াল করলে এমন কোনো পোস্টার নজরে পড়তে পারে যেখানে লেখা—চিনি একটি ধীরগতির বিষ!
চায়ের সঙ্গে কিংবা গরম পানির সঙ্গে লেবুযোগে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস অনেকেই গড়ে তুলেছেন। ফলে খাবার হজমে সহায়তা হয়, দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য, পাওয়া যায় চকচকে ত্বক, ঘুম হয় ভালো—এ রকম আরও উপকারিতা সম্পর্কে কম-বেশি অনেকে জানেন। আর যাঁরা না জানেন, তাঁরা অন্তর্জাল ঘাঁটলে পেয়ে যাবেন মধুর নানা গুণের কথা।
একইভাবে চিনির ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হওয়া যায়। যেমন অতিরিক্ত চিনি খেলে লিভারের চারপাশে চর্বির স্তর জমে। ফলে লিভারের আকৃতি পরিবর্তন ও কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। মুটিয়ে যাওয়ার জন্য তো চিনিই দায়ী।
ধরলাম, এ কথাগুলো কামাল-মরিয়ম দম্পতি জানেন না বা বোঝেন না। কিন্তু তাঁরা যে অসৎ পথ বেছে নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছিলেন, চিনি আর রাসায়নিক তরল দিয়ে তৈরি দ্রব্যকে মধু বলে চালাচ্ছিলেন, সেটা তো ঠিক? তাঁদের মধু খেয়ে যদি মুটিয়ে যান কিংবা অসুখে পড়েন, তাহলে তো মধুর ওপর থেকে সাধারণ বিশ্বাসটাই উঠে যাবে ভোক্তার!
রসিকতা থাক। কামাল-মরিয়মদের মতো অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যেন তা নজির হয়ে থাকে এবং কেউ আর অসাধুতা করতে না পারে।