গলায় দড়ি বাঁধা প্রশাসন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। দড়ির অপর প্রান্ত বাসমালিকদের হাতে। এই অবস্থায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক ছাত্রীর স্লোগান যেন কানেই যাচ্ছে না প্রশাসনের। এভাবেই শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গচিত্রে ফুটে উঠেছে সড়কে অব্যবস্থাপনার চিত্র। রাজধানীতে গতকাল রোববার রামপুরা ব্রিজের ফুটপাতের ওপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের সময় এই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রায় একই সময়ে রাজধানীর শাহবাগে প্রতীকী লাশের মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রামপুরার শিক্ষার্থীরা ১১ দফা এবং শাহবাগের শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানিয়েছে।
ঢাকার বাইরেও এই দিন ১৫টির মতো জেলায় শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এর মধ্যে বরিশালে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পুলিশ বাধা
দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে ১১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীতেও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহনমালিকেরা।
রামপুরায় গতকাল শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনটির আয়োজন করা হয় দুপুর ১২টার দিকে। প্রায় ৪০ মিনিট চলে এই কর্মসূচি। গতকালের মানববন্ধনের সময় শিক্ষার্থীদের প্রদর্শিত ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, বাসমালিকেরা প্রশাসনের গলায় দড়ি বেঁধে অপর অংশ নিজেদের হাতে রেখেছেন। একজন ছাত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমার ভাই মরল কেন? প্রশাসন জবাব চাই’। কিন্তু গলায় দড়ি বাঁধা প্রশাসন সেই স্লোগানে কানই দিচ্ছে না। প্রশাসন ঘুমাচ্ছে। আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, হাস্যরত প্রশাসনের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছেন এক বাসমালিক। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে এক ছাত্রী। তার দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন এক পুলিশ সদস্য।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা জানায়, আজ সোমবার দুপুর ১২টায় রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। এ সময় সবার কালো কাপড় দিয়ে মুখও বাঁধা থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের স্মরণে এই আয়োজন।
রামপুরার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী খিলগাঁও মডেল কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, গত শনিবার গ্রিন ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন। প্রতিদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে, শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যত দিন সড়ক নিরাপদ না হবে, তত দিন তাদের এই কর্মসূচি চলবে।
রামপুরায় শিক্ষার্থীদের গতকালের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো বাধা দেয়নি। তবে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, অর্ধেক ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের প্রতীকী লাশের মিছিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা দিয়েছে।
স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইনজামুল হক বলেন, শাহবাগ মোড় থেকে গতকাল বেলা পৌনে ১টার দিকে মিছিল শুরু করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন তাঁরা।
শাহবাগের কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিদ্রোহী গানের কর্মসূচি করবেন তাঁরা।
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যান চলাচল ব্যাহত হয় এ রকম কোনো কাজ আমরা করতে দেব না। প্রয়োজনে যান চলাচল ব্যাহত না হয় এমন কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে তারা তাদের প্রোগ্রাম সম্পন্ন করবে। মিছিল নিয়ে তারা রাস্তায় হাঁটলেও যান চলাচল ব্যাহত হবে। তাই আমরা তাদের এটিও করতে দেব না।’
এবার চট্টগ্রামে হাফ ভাড়া
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ১১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে। তিনি জানান, পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ও ছবিযুক্ত আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) প্রদর্শন করতে হবে। তবে সরকারি ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটিতে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘হাফ ভাড়া শুধু চট্টগ্রাম শহরে কার্যকর হবে, বাইরে হবে না। যেখানে সিটি সার্ভিস চালু আছে, সেখানেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা নগরীতে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
তবে শর্তসাপেক্ষে এই হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। পরিবহনের মালিকদের সংবাদ সম্মেলনের পর সারা দেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করার দাবিতে গতকাল বেলা ১টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতারা। স্মারকলিপিতে চার দফা দাবি জানানো হয়।