‘চোখে ভালো দেখতি পাইনি। এক চোখে কোনো রকম দেখতি পাই। একটা সন্তান হলি স্বামী ছেড়ি দিলো। তারপর বাবার বাড়িতে থাকি। খেয়ে না খেয়ে চলে দিন। নদীতে মাছ ধরি তাতেই কোন রকমে চলে। চোখে দেখতি পাইনি তাই রাতির জোয়ারে জাল টানতি পারিনি। দিনের জোয়ারে নদীতে জাল টানি। ছোট্ট মাছ চোখি দেখতি পাইনি তাই মাকে সঙ্গে নিয়ে আসি। মাছ বেছি গুনে দেয়।’
এভাবে বলছিলেন কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে মদিনাবাদ গ্রামে বাবার বাড়িতে বসবাস করা স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ময়না খাতুন (২০)। ময়না আরও বলেন, কোন দিন ৫০টি পোনা, এক শত পোনা, আবার কোন দিন ২০০ থেকে আড়াই শত পোনা পাই। বাজার দরে প্রতিটা পোনা কোন দিন ৫০ পয়সা, ৭০ পয়সা, আবার ১ টাকা করে বিক্রি করি। এভাবে কোন দিন ৫০ টাকা, ৭০ টাকা, ১০০ টাকা বা ১৫০ টাকা করে আয় করি। সামান্য আয়ে অনেক কষ্ট করে জীবনসংগ্রাম করতে হয়।
৭ থেকে ৮ বছর বয়স থেকেই চোখে কম দেখতেন ময়না খাতুন। তখন তার গরিব বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি তার চোখের চিকিৎসা আর লেখা পড়ার খরচ বহন করার। অদম্য ইচ্ছা থাকলেও পারেনি লেখাপড়া করতে। যখন তার বয়স ১৬ বছর তখন পাইকগাছা উপজেলায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দুইয়ের মধ্যে কন্যা সন্তানের মা হন ময়না। প্রতিনিয়ত অসুস্থ, চোখে কম দেখা, কাজ করতে না পারা, তার ওপর কন্যা সন্তান। শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন।
নির্যাতনের একপর্যায়ে স্বামী তাকে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে চলে আসে বাবার বাড়িতে। শুরু হয় তার জীবনসংগ্রাম। বাল্য বিবাহের কারণেই তার জীবনে এমন পরিণতি বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন।
কয়রা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। শুধু ময়না নয়, এ রকম যত অসহায় মানুষ আছেন সবাইকে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।