চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। আগে বছরের এ সময়ে খেজুরের রস আহরণে গাছিরা হাতে দা ও কোমরে ঝুড়ি-দড়ি বেঁধে পড়ন্ত বিকেলে বের হতেন। সকালে রস সংগ্রহ করতেন। তবে এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ৩০ বছর আগেও এ অঞ্চলে অনেক খেজুর গাছ ছিল। গাছিরা সকালে যখন খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় করার জন্য নিয়ে আসতেন, তখন এলাকার লোকজন রসের জন্য ভিড় করত। এক কলসি রস ৫-১০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে এক কলসি রস ৫০০ টাকা দিয়েও পাওয়া কঠিন। তাঁরা বলেন, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার কারণে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এলাকায় খেজুর গাছ রোপণ করা হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনিরা তো আর সেই দুধচিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না।’
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে ইটের ভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানো হয়। এ কারণে খেজুর বৃক্ষের বিরাট অংশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় খেজুর গাছ, রস ও গুড় চিরতরে হারিয়ে যাবে।’ এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে জানান তাঁরা।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, খেজুর বহুবর্ষজীবী গাছ হওয়ার কারণে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের একটা প্রকল্প আছে। এই প্রকল্পের অধীনে লোহাগাড়াতে কিছু খেজুর গাছ পাঠাবে। এলাকায় খেজুর গাছ লাগানোর জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হবে বলে তিনি জানান।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশে ৯০ লাখের অধিক খেজুর গাছ রয়েছে। এর মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে দৈনিক ৩-৫ কেজি রস পাওয়া যায়। এ রসে আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি, খনিজ লবণসহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান আছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অপরদিকে খেজুর গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এ গাছ মাটি ক্ষয়রোধ করে।