কুষ্টিয়ার দৌলতপুরসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাছ শিকারের নিষিদ্ধ জাল চায়না দুয়ারি। আর এ জাল দিয়ে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে বিভিন্ন চক্র। এসব জাল উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসন বারবার অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে মাছ শিকার।
স্থানীয়রা জানান, চায়না দুয়ারি মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। ডিম-মাছ, পোকামাকড় কারওরই রেহাই নেই চায়না দুয়ারি থেকে। নদীর পানিপ্রবাহেও বাধা সৃষ্টি করে এই জাল। এ ছাড়া মাছের বংশ বিস্তারেও বিঘ্ন ঘটে।
আর এ জাল প্রকাশ্যে বিক্রি ও মাছ নিধন চললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি এই জালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়না দুয়ারির ফাঁদে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। যা প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা ও মাথাভাঙা নদীতে কিছু মৎস্য শিকারি নির্বিঘ্নে মাছ ধরছেন এই ফাঁদ দিয়ে। উপজেলার ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারি, রামকৃষ্ণপুর, খলিসাকুণ্ডি ও প্রাগপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই চায়না দুয়ারি ফাঁদ দিয়ে ধরা দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা বিক্রি হয় বলেও জানা যায়।
রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের একাধিক জেলে জানিয়েছেন, নদীতে পেতে রাখা কিংবা ডাঙায় পরিচর্যা চালানো চায়না দুয়ারি সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। এর আকার আকৃতি ও ধরন সম্পূর্ণ আলাদা।
এদিকে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর কুষ্টিয়াসহ দেশের ৩৮টি জেলায় পরিচালিত হয় মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযান। এতে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও কিছু ইলিশ জব্দ করে প্রশাসন। চায়না দুয়ারি জালে মাছ শিকারের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লাগাতার ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ আর জলজ প্রাণী। চলতি সপ্তাহেও দেখা গেছে নদ-নদীতে চায়না দুয়ারির অবৈধ ব্যবহার।
এ ছাড়া নদীতে সব ধরনের মাছ সংকটের অভিযোগ করেন জেলেরা। আশানুরূপ মাছ না পেয়ে হতাশা নিয়ে পাড়ে ফিরতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন জেলেরা।
উপজেলার পদ্মায় নিয়মিত মাছ ধরেন এমন কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, প্রকারভেদে চায়না দুয়ারির দাম ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে আগে এর দাম কিছুটা কম ছিল। এখন ব্যবহার বাড়ায় দামও বেড়েছে। দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চায়না দুয়ারি তৈরি হলেও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় পার্শ্ববর্তী জেলা রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকেই বেশি কেনা হয়।
এ বিষয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে এই ফাঁদ অধিক মূল্যে বিক্রি় করে আসছে। তবে এসব জাল বিক্রি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।’
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার সহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি দেশব্যাপী মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের অংশ হিসাবে পরিচালিত অভিযানে কারেন্ট জাল ও ইলিশের পাশাপাশি ১০০ মিটারের মতো চায়না দুয়ারি জব্দ করা সম্ভব হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, আনুষ্ঠানিক এসব অভিযানে জব্দ করা হয়েছে কারেন্ট জাল। আর বেশির ভাগ চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকারি চক্র ধরা রয়েছে ছোঁয়ার বাইরে। ইলিশের প্রজনন মৌসুম ছাড়া সারা বছর প্রশাসনের কোনোই নজরদারি নেই নদ-নদীতে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ইতিমধ্যেই চায়না দুয়ারি প্রতিরোধে জেলার সব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।