ব্যাংকিং খাতের বিরাজমান সমস্যা এবং করণীয় বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক
ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে অর্থনীতি বর্তমানে কেমন চলছে?
তৌফিক আহমদ চৌধুরী: স্বাধীনতার পরই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ ও রপ্তানি প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু করোনায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুরো অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। করোনার পর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকার বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে। আর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকাশটা কেমন ছিল?
তৌফিক: দেশ স্বাধীনের পর হাতেগুনা কয়েকটি ব্যাংক ছিল। এখন দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক খাতের ভূমিকাও দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু ব্যাংক পরিচালনায় বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। যা কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে আমানতকারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে ঋণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: ব্যবসায়ীরা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ না করে ব্যাংকনির্ভর হচ্ছে কেন?
তৌফিক: ব্যাংক থেকে ঋণ সংগ্রহ করা সহজ। একই সম্পদ দেখিয়ে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা বিশেষ মহলের প্রভাব খাটিয়ে বড় বড় ঋণ ছাড় করা হয়। এসব ঋণ পরিশোধ না করার ক্ষেত্রেও ওই প্রভাবশালী মহলকে বারবার ব্যবহার করা হয়। আর ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারলেও অন্য ব্যাংক থেকে আঁতাত করে অনায়াসে ঋণ নেন এবং নানা কৌশলে সেই ঋণ পুনঃ তফসিল করেন। এভাবে বছরের পর বছর অতিবাহিত হয় কিন্তু সেই ঋণ আর পরিশোধ করার দরকার পড়ে না।
আজকের পত্রিকা: ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রোধের উপায় কী?
তৌফিক: ব্যাংকের অর্থ মূলত আমানতকারীদের সঞ্চিত সম্পদ। এটা রক্ষা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ঋণ প্রদানে অধিক সচেতন হতে হবে। কারও অন্যায় আবদার রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আর ব্যাংকে পাঁচ বছরের কম মেয়াদি ঋণ দিতে হবে। কোনো বিনিয়োগকারী বা ঋণগ্রহীতার ৫০০ কোটি টাকার বেশি দরকার হলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে শুধু আদালতে না গিয়ে বিশেষ উপায়ে কঠোরভাবে ঋণ আদায় করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ঋণের কিস্তি আদায়ে শিথিলতা খেলাপিদের উৎসাহ জোগাচ্ছে কি?
তৌফিক: ঋণ আদায়ের শিথিলতা খেলাপিদের উৎসাহ দিচ্ছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। অনেকে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করছেন না। এ সংস্কৃতি মারাত্মক ক্ষতিকর। এটা রোধ করা না গেলে একসময় ব্যাংকব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
আজকের পত্রিকা: ব্যাংকের সমস্যা সমাধানে মূল ভূমিকা কার হওয়া উচিত?
তৌফিক: ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমান, খেলাপি ঋণ এবং বাজারব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।