নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার এলাকায় পশুখাদ্য উৎপাদন করছে মাস ফিড নামের একটি কোম্পানি। উৎপাদনে ব্যবহৃত বর্জ্যের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ছাড়া রাস্তা আটকে সরু করায় দুই শতাধিক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী বৈদ্যেরবাজার লঞ্চঘাট এলাকায় গত দু’মাস ধরে মাস ফিড কোম্পানি রামগঞ্জ ও সাতভাইয়াপাড়া গ্রামে দুটি রাস্তা সরু করে চলাচলের অনুপযোগী করে রেখেছে। এ ছাড়া কোম্পানিটি ওই এলাকার স্থানীয় লোকজনকে জমি বিক্রি করে অন্যত্র ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কোম্পানির নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাশের বাড়িতে রেখে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পশুখাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার জনগণ।
তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সব বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারকে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান। তারা অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।।
বৈদ্যেরবাজার-রামগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ আরতী রানী দাস বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা নদীতে চলাচলের জন্য সহজেই যাতায়াত করতাম। কিন্তু এ কোম্পানি গত কয়েক মাস বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে রাস্তা ছোট করে রেখেছে। নদীতে যাওয়ার মতো কোনো উপায় নাই। এ ছাড়া নদীর ঘাটে আমাদের নৌকা রাখতে বাধা দিচ্ছে। কোম্পানির লোকজন এসে বাড়িঘর বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার জন্য বাধ্য করছে।’
সাতভাইয়াপাড়া গ্রামে গৃহবধূ মাসুদা বেগম বলেন, ‘কোম্পানি আমার বাড়ির সীমানা ঘেঁষে প্রায় ১০০ ফুট গভীর করে হাউস নির্মাণ করছে। এতে আমার বসতঘর ভেঙে গেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে কোম্পানির লোকজন হুমকি দিয়ে জমি বিক্রি করে দিতে বলছে।’
সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, মাস ফিড নামের কোম্পানি আমাদের বাড়িতে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, এমনভাবে বালু স্তূপ করে রেখেছে। গত কয়েক দিন আগে একটু বৃষ্টিতেই বাড়িঘরে পানি জমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে। ভরা মৌসুমে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারি না, পানির জলাবদ্ধতায় ময়লা আবর্জনা জমে পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়।
মাস ফিডের কোম্পানির ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলতে পারব না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার সব দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার বলেন, ‘এলাকাবাসীর অনুরোধে কোম্পানিতে গিয়ে ঘর ভাঙা ও কয়েকটি ঘর দেবে যাওয়ার সত্যতা পেয়েছি। কোম্পানি ও এলাকার লোকজনের সামনে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’ তবে রাস্তা সংকুচিত করার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলে তিনি জানান।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, ‘এলাকাবাসীকে ক্ষতি করে কোনো কোম্পানি কাজ করতে পারে না। কেউ এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’