সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে স্থির করেছিলেন রাজ্জাক। তখন থাকতেন কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলো, তাতে তিনি বুঝলেন এখানে থাকা যাবে না। ঠিক করলেন বোম্বে চলে যাবেন। কিন্তু তাঁর ওস্তাদ পীযূষ বোস বললেন, ক্যারিয়ার যদি করতে চাও তাহলে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাও।
কলকাতায় রাজ্জাকদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল, কারখানা ছিল। তাঁরা ছিলেন সচ্ছল। কিন্তু একই সঙ্গে রাজ্জাক ছিলেন খুব জেদি। তিনি কলকাতার পাট চুকিয়ে আট মাসের শিশু বাপ্পা এবং স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকায়। ঢাকার কমলাপুরে ছোট্ট একটা বাড়ি ভাড়া করলেন। রোজগার কিছু নেই, জমানো টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বাড়ি পরিবর্তন করে ফার্মগেট এসেছেন। টেলিভিশনের সংবাদ পাঠক হিসেবে অডিশন দিয়ে পাস করলেন। কিন্তু অভিনেত্রী রেশমার স্বামী জামান আলী খান বললেন, ‘তুমি অভিনেতা মানুষ, তুমি কেন খবর পড়বে?’ নিয়ে গেলেন ডিআইটিতে, ধারাবাহিক নাটক ঘরোয়া হচ্ছিল তখন। সেই নাটকের লোক হয়ে গেলেন রাজ্জাক।
ফার্মগেট থেকে হেঁটে হেঁটে ডিআইটি টেলিভিশন ভবনে যান। তাতে কিছু টাকা বাঁচে। এক টিন ডানো দুধের দাম ৫ টাকা। সাশ্রয় হয় তাতে।
কাজী জহির, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্তদের কাছে যান রাজ্জাক। অনুরোধ করেন, ‘একটা চরিত্র দিন আমাকে!’ সবাই শোনেন। বোম্বের শশধর মুখার্জির ফিল্মালয় থেকে নয় মাসের কোর্স করেছেন, সে কথা বলেন। বলেন, ‘ছোটখাটো একটা পার্ট দেন! হিরো হতে চাই না। চাই যেকোনো একটা চরিত্র!’ ১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন ধরনের ছবিতে ছোটখাটো কাজ মিলতে লাগল।
এরপর একদিন যোগাযোগ হলো জহির রায়হানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা আমার কায়েতটুলীর বাড়িতে চলে আসবেন। চুলটুল আঁচড়াবেন না।’
কথামতো কাজ করায় রাজ্জাককে দেখেই জহির বলেছিলেন, ‘আমি আপনাকে নায়কের পার্ট দেব!’
এভাবেই শুরু।
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, চোখের আলোয় ২, পৃষ্ঠা ১২৬-১২৭