তারাগঞ্জ হাটে জায়গার সংকটের কারণে তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ওপর চলছে পণ্য কেনাবেচা। এতে করে ফসল নিয়ে আসা কৃষকদের পাশাপাশি সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করলেও সমস্যা সমাধানে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ।
উপজেলায় ১৫টি হাটবাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। প্রতি সোম ও শুক্রবার এখানে হাট বসে। আর প্রতিদিন বসে বাজার। এখান থেকে প্রতি বছর দুই কোটি টাকাও বেশি ইজারা আয় হয়।
গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, অনেক কৃষক অগ্রণী ব্যাংকের সামনে থেকে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত এবং পুরাতন চৌপথী থেকে অগ্রণী ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক দখল করে রেখেছেন। তাঁরা হাটের ভেতর জায়গা না হওয়ায় সড়কে দাঁড়িয়ে ধান, পাট, আদা, হলুদের পাশাপাশি গরু বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের ভিড়ে এক কিলোমিটার সড়ক যেন হাটে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন এবং নিরুপায় পথচারীরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, হাটের ভেতর দিয়ে পাকা সড়কটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরে চলে গেছে। এই সড়ক ধরে দুই উপজেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। দিনরাত চলাচল করে কয়েক শ রিকশা-ভ্যান, মিনিবাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে হাটের কাছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে হয় এই সড়ক দিয়ে।
কথা হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধান বিক্রি করা বাহাগিলি গ্রামের কৃষক মিল্লাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামার কষ্ট কায়ও বোঝেছে না। হাটের ভেতরোত হামার ফসল বেচার জয়গা নাই। ওই জন্যে রাস্তাত দাঁড়ে কম দামে ফসল বেচপার নাগোছে। তাও কায়ও হামার সমস্যা সমাধান করোছে না।’
তারাগঞ্জ ও/এ ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আজমিতা খাতুন জানান, হাটের দিন মাদ্রাসায় আসতে খুব সমস্যা হয়। মাদ্রাসার গেট পর্যন্ত রিকশা-ভ্যান নিয়ে যাওয়া যায় না। এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ঠেলাঠেলি করে অতি কষ্টে যাতায়াত করতে হয়।
একই সমস্যার কথা জানান রাধারানী মহিলা কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, হাটের দিন ভিড়ের জন্য হেঁটে কলেজ যাওয়া যায় না। দেড় কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ঘুরে কলেজে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়।
কিছু লোক হাটে কৃষকদের পণ্য বিক্রির জায়গা দখল করে আধা পাকা ঘর তৈরি করেছে বলে জানান তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, জায়গার অভাবে কৃষকেরা এখন ফসল, গরু নিয়ে সড়কের ওপর বসতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘তারাগঞ্জবাসীর এ দুরবস্থা দীর্ঘদিনের। ২০০৭ সালে দোকানপাট উচ্ছেদের পর আমরা ব্যবসায়ীরা বাজারটির ভেতরে ধান, পাট, গমসহ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তা রাখা হয়নি। জায়গার অভাবে কৃষক এখন রাস্তার ওপর হাট বসায়। ফলে যানবাহন, পথচারী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সমস্যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো তো দীর্ঘদিনের। পরিকল্পনা করে এগুলো সমাধান চেষ্টা করা হবে।’