ইউক্রেন ইস্যুতে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে দুটি আলাদা প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। প্রায় দুই মাস অবস্থা পর্যালোচনা করে গত বুধবার দুই পক্ষই রাশিয়ার প্রস্তাবের লিখিত জবাব দিয়েছে, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে এতে রাশিয়ার মূল উদ্বেগকে আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে মস্কো।
রয়টার্স জানায়, রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন সুলিভান গত বুধবার নিজেদের লিখিত জবাব মস্কোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের মিত্র ও সহযোগীদের উদ্বেগের কথা রাশিয়াকে জানিয়েছি। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা মিলেমিশে কাজ করতে পারি, তা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পূর্ব ইউরোপের যেকোনো দেশের জন্য ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথ খোলা থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জবাবের কয়েক ঘণ্টা পর ন্যাটোও রাশিয়ার প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে। সামরিক জোটটির সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘উত্তেজনা কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসন করা যায় বলে মনে করে ন্যাটো।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর লিখিত জবাবে রাশিয়ার মূল উদ্বেগ, তথা সাবেক সোভিয়েত রাশিয়াভুক্ত পূর্ব ইউরোপের আর কোনো দেশকে ন্যাটোর সদস্য না করার প্রতিশ্রুতি নেই বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া মস্কো ও ওয়াশিংটন উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চলমান ইউক্রেন সংকট নিয়ে গতকাল টেলিফোনে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং ই। সব পক্ষকে শান্তভাবে সংকট সমাধানের পথ বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একই ইস্যুতে গত বুধবার প্যারিসে আলোচনায় বসেছিলেন রাশিয়া, ইউক্রেন, জার্মানি এবং ফ্রান্সের কর্মকর্তারা। পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি করতে তাঁরা প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত করতে দুই সপ্তাহের মধ্যে বার্লিনে তাঁরা আবার আলোচনায় বসবেন।
২০১৪ সালে রাশিয়াপন্থী ইউক্রেনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ফেডোরোভিচ ইয়ানুকোভিচকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় অপসারণ করা হয়। প্রতিক্রিয়ায় এক ঝটিকা আক্রমণে দেশটির উপদ্বীপ ক্রাইমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। এরপর থেকে রুশ ভাষাভাষী পূর্ব ইউক্রেনে সরকার ও রাশিয়াপন্থীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
নিজেদের চারপাশে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উপস্থিতি বৃদ্ধি কখনো ভালোভাবে নেয়নি রাশিয়া। এর মধ্যে সম্প্রতি ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদানের সম্ভাবনা বাড়ায়, দেশটির সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা সমাবেশ করে রাশিয়া। এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের।