১৯৭১ সালে ২৬ বছরের টগবগে যুবক তোজাব উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যান ভারতের কোচবিহারে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর শিলিগুড়ির মুজিব ক্যাম্পে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ নেন। ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। বর্তমান লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার দোয়ানীর চর, হাতিবান্ধার বড়খাতা ও পাটগ্রামের জমগ্রাম এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘ ৪০ বছর অর্থকষ্টে কাটিয়েছেন তিনি। অর্থাভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি।
স্বাধীন দেশে জীবনের দীর্ঘ সময় রিকশার প্যাডেল মেরে লাশ বহন করে চালিয়েছেন সংসার। বর্তমানে স্ত্রী এছরা বিবিকে নিয়ে তাঁর সংসার।
তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে কাঁচাপাকা সড়ক ধরে ঘনিরামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প
ঘেঁষে তোজাব উদ্দিনের বাড়ি। বাড়ির উঠানে বসে যুদ্ধদিনের সেই সব গল্প শুরু করেন। তোজাব উদ্দিন বলেন, ‘সাত দিন কলাপাতা, দুর্বা ঘাস খেয়ে জীবন বাঁচিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দীর্ঘ সময় অর্থকষ্টে কাটিয়েছি। সন্তানদের বেশি লেখাপড়া করাতে পারিনি। সরকার এখন ঘর করে দিয়েছে। প্রতিমাসে ভাতা দিচ্ছে। শেষ সময়টা ভালো কাটছে।’
যুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা জানতে চাইলে তোজাব উদ্দিন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বরের কথা। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার বড়খাতা এলাকা। পরের দিন ২০ নভেম্বর ছিল ঈদুল ফিতর। পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের ঈদ পালন করতে দেয়নি। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে তাঁরা অতর্কিত হামলা চালায়। কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেজবাহ উদ্দিন ফারুকের নেতৃত্ব আমাদের কোম্পানিসহ আরও তিনটি কোম্পানি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়। এ যুদ্ধে ৯ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আমাদের মধ্যে শহীদ হন তিনজন। ২৪ নভেম্বর আমাদের কাছে খবর আসে ঈদ উপলক্ষে পাকহানাদার বাহিনীরা বড়খাতার একটি বড় মাঠে গরু জবাই করে আনন্দে মাংস খাবে। তখন আমাদের চারটি কোম্পানি একত্রিত হয়ে পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তারা জবাই করা গরু রেখে পালিয়ে যায়। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এতে একটি কোম্পানির সবাই শহীদ হন।’
আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান? এমন প্রশ্নে তোজাব উদ্দিন বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সমতার। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। মানুষ মানুষের জন্য কাজ করবে। আগামী দিনে এই দেশ আরও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে বিশ্বদরবারে স্থান করে নিতে পারে, এটাই প্রত্যাশা।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, তারাগঞ্জে প্রথম যে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয় তাঁর মধ্যে তোজাব উদ্দিনের নাম ছিল। কিন্তু প্রথম দিকে ৩০০ টাকায় তাঁর জীবন চলত না। তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও লাশ বহন করে সংসার চালাতেন। এখন তোজাব উদ্দিনের সুখের সংসার।