হোম > ছাপা সংস্করণ

অভিভাবক

নাফিসা চৌধুরী

সাধারণত সন্তানের অভিভাবক তার মা-বাবা অথবা তাঁদের অবর্তমানে বড় ভাইবোন। কিন্তু আমাদের দেশে এক আজব ব্যাপার লক্ষ করা যায়! সেটা কী?

সেটা হলো, একজন মেয়ের অভিভাবক তার ছোট ভাইও হয়, যদিও তার বয়স ছয় বছর। সপ্তম শ্রেণির কোচিংয়ে যাওয়া-আসার সময় দেখতাম আমাদের ব্যাচের এক মেয়ে তার ছয় বছরের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে যাতায়াত করে। বাসা মাত্র দুই রাস্তা পরেই। আমার বাসা অন্য ব্লকে ছিল, মায়ের সঙ্গে যেতাম-আসতাম। তখন ভাবতাম, রাস্তায় যদি কোনো ছেলে ওই মেয়েটাকে বিরক্ত করে অথবা কোনো বিপদ হয়েই যায়, তাতে কে কাকে বাঁচাবে?

আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে শুধু ছেলেদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং অন্যায়ভাবে ছাড়ও দেওয়া হয়। এখানে মেয়েদের নিরাপত্তার কথা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয় সেই তিন বছর বয়সের সময়কাল থেকেই। বাইরে খেলতে দেওয়া বা একা যাওয়া-আসা করা, সবকিছুই অনিরাপদ। অন্তত অভিভাবকদের ভাবনা এ রকমই হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা দেখতে দেখতে।

আমার ছোট ভাই আমার থেকে ১১ বছরের ছোট। ও দিব্যি বাড়ির কাছের বা অন্য ব্লকের মাঠে গিয়ে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলে আসে। আমরা বাসার সামনের রাস্তায় খেলতে চাইলেও মানা করা হতো। স্কুলের মাঠ থাকায় রক্ষা। তা-ও খেলাধুলায় বারবার মা অনুৎসাহিত করেছেন। এখন তো মাঠও নেই অনেক ভালো ভালো স্কুলে। সেখানে মেয়েরা কি শুধুই পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করতে পারে না? সত্যিই কি সেটা দেহ-মনের বিকাশের জন্য ভালো?

আমি যেখানে কোচিংয়ে পড়তে যেতাম, সেখানে এক মেয়েবন্ধুর বড় ভাই ছিল। কোচিংয়ের গলির মোড়েই সে আড্ডা দিত, সিগারেট খেত। মেয়েদের সঙ্গে প্রেমও করত। কিন্তু আমার বন্ধুটি মেয়ে হওয়ায় তার অলিখিত অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতেন সেই বড় ভাই। মাথা নিচু করে বাসা থেকে বের হতে হবে আর মাথা নিচু করেই বাসায় ঢোকা লাগবে—এটাই নিয়ম ছিল। আমাদের সঙ্গে রাস্তায় হা হা-হি হি করা নিষেধ আর করলে সোজা বাবার কাছে নালিশ চলে যাবে।

এই ভাই আর এই বোনের জীবনযাপন পদ্ধতিকে কীভাবে দেখা হবে? আসলে এই বৈপরীত্য কোন প্রবণতাকে উসকে দেয়?

অনেক মা তাঁর মেয়ে প্রেম করে কি না বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে কথা বলল কি না অথবা এই আসা-যাওয়ার পথেই কী কী হলো, সেসব রিপোর্ট নেন তার ছোট ছয়-সাত বছরের ছেলেটির কাছ থেকে। আর সে ছেলেটি হয়ে যায় মায়ের খুব বিশ্বাসভাজন রিপোর্টার।

কখনো ভেবে দেখা হয় কি, সেই ছোট্ট ছেলেটি, যে কিনা শিশু, সে তার মায়ের সহায়তায় তথাকথিত প্রেমের সম্পর্ক বা আরও অনেক বিষয় জেনে ইঁচড়ে পাকা হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো জানা বা বোঝা দরকার ছিল আরও অনেক পরে? ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে বড় বোন যে অপমানের শিকার হয়, সেটা কি স্বাস্থ্যকর এক সমাজের জন্ম দিতে পারে? তাতে বোনের মর্যাদা কি রক্ষা হয়?

জয়ার ছোট ভাই জীতুও ছিল তার মায়ের রিপোর্টার। তবে জয়া বুদ্ধি করে পটিয়ে নিয়েছে ছোট ভাইকে। টাকা বা চকলেটের বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখা হয় তার। এ বয়সেই নিজের অজান্তে সে ঘুষ নিচ্ছে, সে জানে বোন প্রেম করে রনি ভাইয়ের সঙ্গে আর চিঠি পৌঁছে দেওয়ার, মানে ডাকপিয়নের কাজ তার। এদিকে দিব্যি ব্যালান্স করে চলছে জয়া-রনি-জীতু আর মা জানেন তাঁর রিপোর্টার কখনো ভুল বা মিথ্যা রিপোর্ট দেয় না।

অভিভাবকেরা জেনে-বুঝেই মেয়েদের এভাবে অসম্মান করছেন। ছোট ছেলেটাকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এবং তা চলছে দিনের পর দিন।

একবারও কি এই অসম্মান আর অনৈতিকতার শরীরে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে?

লেখক: নাফিসা চৌধুরী,সংস্কৃতিকর্মী

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ