শীত কখন চলে যায়—এখন আর টেরই পাওয়া যায় না; কিন্তু ফুলগুলো বলে দেয়, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ হ্যাঁ, বসন্ত এসে গেছে। আগুন লেগেছে বৃক্ষসমাজে। অশোক-পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এরই মধ্যে কি শোনা যাচ্ছে কুহুতান?
ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহরে বসন্ত এল কি না, তা বোঝা সহজ নয়। কিন্তু প্রকৃতি যেখানে নিজেকে খুঁজে পায় একরাশ প্রশান্তির মধ্যে, সেখানে তাকে চেনা যায় নিজের হাতের তালুর মতো। সেখানে রঙের বৈচিত্র্য সাড়া জাগায় মনে। আর জঞ্জালে ভরা শহরের মানুষেরাও কিন্তু বসন্তকে দিব্যি খুঁজে নেয় তার মনের অন্দরে এবং পোশাকের ঔজ্জ্বল্যে।
আর হ্যাঁ, বহুদিনের বসন্তের সঙ্গী হয়েছে ভালোবাসা দিবস। ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে যার নাম। বিদেশ থেকে এসেছে দিনটি। দিনটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। তবে দিনটি ভালোবাসায় জড়িয়ে হৃদয়কে ছোঁয়ার দিন। এই আগুন লাগা ফাগুন আর ভালোবাসা দিবসে চাঙা হয়ে ওঠে ব্যবসাও। প্রিয়জনের জন্য ফুল কিংবা সেরা উপহারটি কেনার দিকে থাকে ভালোবাসার মানুষটির ঝোঁক। ফুলের দাম যায় বেড়ে, ছোট ছোট উপহারের পাশাপাশি বড় বড় উপহারও নজরকাড়া দূরত্বে ঝুলতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মানুষের প্রতিটি দিনই বসন্তদিন হলে ভালো হয়, প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন হলে ভালো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি দিনে যখন বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস এসে মিলে যায়, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাগুলোই যেন নির্ভুল অনুরণন তুলতে থাকে মনে, ‘এই বসন্তে বিশ্বখাতায়/হিসেব নেইকো পুষ্পে পাতায়/জগৎ যেন ঝোঁকের মাথায়/সকল কথাই বাড়িয়ে বলে।’
এই বাড়িয়ে বলায় ক্ষতি নেই কিছু। নিষ্পাপ এই বাড়িয়ে বলা। বসন্তে ভালোবাসায় পূর্ণতা পাক মানুষ, পূর্ণতা পাক ধরিত্রী।