সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ষষ্ঠ দফার শেষ দিনে দুই বিচারক সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার ৫৮ নম্বর সাক্ষী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর সাক্ষ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু করা হয়। তিনি ছাড়াও এদিন সাক্ষ্য দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন।
আদালতে বিচারক তামান্না ফারাহ বলেন, মামলার নয়জন আসামি তাঁর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। জবানবন্দি দেওয়ার আগে সব আসামিকে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। তারপর তাঁরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
একই ধরনের সাক্ষ্য দেন আরেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি আদালতে বলেন, এ মামলার তিনজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুই বিচারকের সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামিপক্ষের জেরা শেষে আগামী ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, এ পর্যন্ত এ মামলায় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসসহ ৫৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এদিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ ছয়জনকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
ওসি প্রদীপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানান, এ মামলার ১২ জন আসামিকে ১৪-১৫ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদে চাপে ফেলে মৃত্যুর ভয় দেখানো হয় এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। তাঁরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। তাই তাঁরা আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন।
গত বছরের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের পর র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মামলার ১৫ আসামি কারাগারে রয়েছেন।