চাহিদামতো বকশিশ না পেয়ে রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ার ঘটনায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) ওয়ার্ড বয় আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ নিয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আসাদুল ইসলাম ধলু ছয় বছর ধরে ওই হাসপাতালে দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছিলেন। প্রতিদিন বেলা ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদের ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য দালালিসহ বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতেন। গত মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার রোগী বিকাশ চন্দ্র কর্মকারকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যান ধলু। এ সময় বিকাশের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিল। কিন্তু ওয়ার্ডে বেড ফাঁকা না থাকায় ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। এ জন্য ৫০০ টাকা দাবি করেন ধলু। বিকাশের পরিবার ২০০ টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু ওই সময় তাদের কাছে ২০০ টাকাও ছিল না। ১৫০ টাকা ছিল, যা ধলুকে দেওয়া হয়। তখন ধলু আরও টাকা দাবি করলে বিকাশের পরিবার অপারগতা প্রকাশ করে। এতে ধলু উত্তেজিত হয়ে রোগী বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালিগালাজ করেন। এরপরই শ্বাসকষ্টে বিকাশের মৃত্যু হয়। এরপরই ধলু পালিয়ে প্রথমে নওগাঁ যান। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
বিকাশের বাড়িতে শোকের মাতম: ওয়ার্ড বয়কে বকশিশ কম দেওয়ায় অক্সিজেন মাক্স খুলে ফেলার কারণে মারা যাওয়া বিকাশের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। ছেলে হারানোর বেদনায় নির্বাক হয়ে গেছেন বিকাশের মা। গতকাল বিকাশের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
বিকাশ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের বিশু কর্মকারের ছেলে। বিকাশ গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র (১৭) ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গ্রিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে নিজের পড়াশোনার ও পরিবারের খরচ চালাত। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিকাশ নিজবাড়ি থেকে উল্যা বাজার যাওয়ার সময় পথে একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।