চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র রেয়াজউদ্দিন বাজার এবং পাশের পৌর জহুর হকার্স মার্কেট এলাকা। অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে এই দুই এলাকার ৮৫টি মার্কেটের সব কটিই। একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো এবং সরু গলিতে থাকা এসব মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা দুর্বলের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি রোধে ভবনগুলোতে জরুরি নির্গমনেরও নেই কোনো ব্যবস্থা।
ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সময় ভবনমালিকদের ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা রাখাসহ বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগাদা দিলেও ভ্রুক্ষেপ নেই ভবনমালিকদের। এতে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে চট্টগ্রামের বৃহত্তম এই পাইকারি বাজার এলাকা ঘিরে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে রেয়াজউদ্দিন বাজারে মোহাম্মদী প্লাজা ও রিজওয়ান কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের প্রাণহানিসহ পাঁচজন হতাহতের পর আবার আলোচনায় আসে নিরাপত্তার বিষয়টি।
এ সময় ভবনমালিকদের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা হিসেবে ফায়ার সেফটি প্ল্যান, বাণিজ্যিক ভবনে আবাসন না রাখা, একটি সিঁড়ি থাকলে বিকল্প সিঁড়ি স্থাপনসহ ১৫টি সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগাদা দেওয়া হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেননি ভবনমালিকেরা।
একই প্রতিবেদনে এই দুটি মার্কেটসহ চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার এবংয় পৌর জহুর হকার্স মার্কেটের ৮৫টি মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস চিহ্নিত করেছিল। এসব মার্কেটে ১৫ হাজার ৮১৩টি দোকান ও গুদাম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রেয়াজউদ্দিন বাজারে ৭৮টি মার্কেট ১৩ হাজার ৫৪৭টি দোকান ও গুদাম রয়েছে। বেশির ভাগ মার্কেট দোতলা ভবন থেকে শুরু করে ১০ তলা ভবন পর্যন্ত। এসব মার্কেটেও ফায়ার সার্ভিসের বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।
চট্টগ্রামে রেয়াজউদ্দিন বাজারে দোকান কর্মচারী সমিতির এক নেতা বলেন, ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের দুর্বলতার কারণে আজ এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সমিতির নেতারা চাইলে ভবনের সব জায়গায় ফায়ার সেফটি যন্ত্র লাগানো থেকে শুরু করে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে পারেন। কিন্তু তাঁরা কোনো উদ্যোগ নেন না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, গত বছর এই তালিকা তৈরির পর অগ্নিঝুঁকির মধ্যে থাকা রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ আশপাশে বিভিন্ন মার্কেটের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এদিকে শনিবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট পরিদর্শনের পর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ মার্কেটগুলোর বর্তমান অবস্থা ও অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তামাকুমণ্ডি লেন বণিক সমিতি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করার পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। পরে সিডিএ চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।